• রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • ভাদ্র ২৪ ১৪৩১

  • || ০৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

Find us in facebook

আশুরা যে কারণে মর্যাদাপূর্ণ

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৪ জুলাই ২০২৪  

Find us in facebook

Find us in facebook

আশুরা (আরবি: عَاشُورَاء) হলো ইসলাম ধর্মে একটি স্মরণীয় দিবস। এটি প্রতি বছর ইসলামি বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস মহররমের ১০ তারিখে ঘটে।

মহররমকে আরবিতে বলা হয় মুহাররমুল হারাম। হাদিসে একে শাহরুল্লাহ তথা আল্লাহর মাস বলে অভিহিত করা হয়েছে। এ মাসের অনন্য কিছু ফজিলত রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আশুরার দিনের ফজিলত।


আশুরা যে কারণে মর্যাদাপূর্ণ


আশুরা বলতে মহররম মাসের ১০ তারিখ বা দশম দিনকে বোঝানো হয়। দিনটি বড়ই ফজিলতপূর্ণ। হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মহররম আল্লাহর মাস। এ মাসে এমন একটি দিন আছে, যেদিন আল্লাহ তাআলা অনেকের তওবা কবুল করেছেন। ভবিষ্যতেও অনেকের তওবা কবুল করবেন’। (তিরমিজি) মুহাদ্দিসগণ একে আশুরার দিন বলেই মতামত দিয়েছেন। (লাতাইফুল মাআরিফ)


রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন হিজরত করে মদিনায় আসেন, সেখানকার আহলে কিতাব ইহুদিদের দিনটি রোজা রেখে উদ্‌যাপন করতে দেখলেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, ‘এই দিনে তোমরা রোজা রাখছ কেন’? জবাবে তারা বলল, ‘এটি একটি মর্যাদাপূর্ণ দিন। আল্লাহ তাআলা এই দিনে হজরত মুসা (আ.) ও তার জাতিকে (ফেরাউনের কবল থেকে) মুক্তি দিয়েছিলেন এবং ফেরাউনকে তার দলবলসহ (সমুদ্রে) নিমজ্জিত করেছিলেন। এরপর হজরত মুসা (আ.) এই দিনে শুকরিয়া আদায় হিসেবে রোজা রাখতেন। তাই আমরাও রোজা রাখি’। এ কথা শুনে নবীজি (সা.) বললেন, ‘হজরত মুসা (আ.) এর অনুসরণের ক্ষেত্রে তো আমরা তোমাদের চেয়ে অধিক হকদার’। এরপর নবীজি (সা.) নিজেও রোজা রাখলেন এবং অন্যদেরও রোজা রাখতে বললেন’। (মুসলিম)


ইহুদিদের কাছে দিনটি এতটাই মর্যাদাপূর্ণ ছিল যে তারা তা ঈদের মতো উদ্‌যাপন করত। হাদিসে এসেছে, আশুরা এমন একটি দিন, যে দিনকে ইহুদিরা সম্মান করত এবং ঈদ হিসেবে গ্রহণ করত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা এই দিনে রোজা রাখো’। (মুসলিম)


হাদিসে আরো এসেছে, হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, জাহিলি যুগে কুরাইশরা আশুরার দিন রোজা রাখত। রাসূলুল্লাহ (সা.)ও হিজরতের আগে আশুরার রোজা রাখতেন। মদিনায় হিজরতের পরও তিনি আশুরার রোজা রেখেছেন এবং এই রোজা রাখার নির্দেশ দিতেন। এরপর রমজানের রোজা ফরজ করা হলে আশুরার রোজা নফলে পরিণত হয়। সুতরাং যার ইচ্ছা সে তা রাখতে পারে, আবার যার ইচ্ছা ছেড়ে দিতে পারে। (মুয়াত্তা মালেক)


আশুরার রোজার ফজিলত


আশুরার রোজার ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, ‘আশুরার দিনের রোজার ব্যাপারে আমি আল্লাহর কাছে প্রত্যাশা রাখি, তিনি আগের এক বছরের (সগিরা) গুনাহ মাফ করে দেবেন’। (মুসলিম)


আরেক হাদিসে এসেছে, ‘হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে আশুরার দিনের চেয়ে গুরুত্ব দিয়ে অন্য কোনো দিন রোজা রাখতে দেখিনি এবং রমজান মাসের চেয়ে অন্য কোনো মাসে এত গুরুত্ব দিয়ে রোজা রাখতে দেখিনি’। (বুখারি)


আশুরার রোজা কয়টি


আশুরার দিনের রোজার সঙ্গে আগে বা পরে এক দিন রোজা রাখাও সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত। ইহুদিদের সঙ্গে না মেলানোর জন্যই রাসূলুল্লাহ (সা.) আশুরার আগের দিন বা পরের দিনও রোজা রাখার ব্যাপারে তাগিদ দিয়েছেন।


হাদিসে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন আশুরার রোজা রাখছিলেন এবং অন্যদের রোজা রাখতে বলছিলেন, তখন সাহাবিগণ বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! এই দিনকে তো ইহুদি-নাসারারা সম্মান করে’। তখন নবীজি (সা.) বললেন, ‘তাহলে আগামী বছর আমরা ৯ তারিখেও রোজা রাখব ইনশা আল্লাহ’। কিন্তু সেই আগামী বছর আসার আগেই নবীজির (সা.) ইন্তেকাল হয়ে যায়। (মুসলিম)


হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) ৯ ও ১০ তারিখে রোজা রাখার কথা বলতেন। ইমাম শাফেয়ি, আহমদ ও ইসহাক এই মত গ্রহণ করেন। (তিরমিজি) এ ছাড়া অনেকে ১০ তারিখসহ আগে এবং পরের এক দিন মিলিয়ে মোট ২টি বা আশুরার দিনসহ মোট ৩টি রোজা রাখা উত্তম মনে করেন। অবশ্যই কেউ যদি শুধু ১০ মহররম রোজা রাখে, তবে সেটিও আশুরার রোজা হিসেবেই গণ্য হবে। তবে হাদিসের নির্দেশনার ওপর আমল না করার কারণে মাকরুহ তথা অনুত্তম হবে। এ জন্য আলিমগণ বলেন, মহররমের ৯ ও ১০ অথবা ১০ ও ১১ তারিখ ২ দিন রোজা রাখাই উত্তম। (ফাতহুল বারি)


আশুরাকে ঘিরে ভিত্তিহীন কথা


আশুরাকে ঘিরে অনেক ভিত্তিহীন কথা সমাজে প্রচলিত আছে। বিভিন্ন ধর্মীয় বইপুস্তকেও এসবের বর্ণনা দেখা যায়। যেমন—এই দিনে আল্লাহ আসমান ও জমিন, পাহাড়-পর্বত, নদ-নদী, কলম, লওহে মাহফুজ আরশ, কুরসি, জান্নাত ইত্যাদি সৃষ্টি করেছেন। আদম (আ.)-কে জান্নাতে প্রবেশ করিয়েছেন। ইদরিস (আ.)-কে আসমানে উঠিয়ে নিয়েছেন। নুহ (আ.)-কে নৌকা থেকে বের করেছেন। দাউদ (আ.) এর তওবা কবুল করেছেন। সোলায়মান (আ.)-কে রাজত্ব প্রদান করেছেন। আইউব (আ.)-এর মসিবত দূর করেছেন। তাওরাত নাজিল করেছেন। ইব্রাহিম (আ.) জন্মগ্রহণ করেছেন। নমরুদের অগ্নিকুণ্ড থেকে রক্ষা পেয়েছেন। ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি দিয়েছেন। ইউনুস (আ.) মাছের পেট থেকে মুক্তি পেয়েছেন। ইউসুফ (আ.) জেলখানা থেকে বের হয়েছেন। ইয়াকুব (আ.) দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেয়েছেন। মুহাম্মাদ (সা.) জন্মগ্রহণ করেছেন। কেয়ামত সংঘটিত হবে ইত্যাদি। এসবের কোনোটিই বিশুদ্ধ বর্ণনা থেকে যথাযথভাবে প্রমাণিত নয়। বিশুদ্ধ বর্ণনায় কেবল মুসা (আ.)-কে ফেরাউনের কবল থেকে মুক্ত করার কথাটি পাওয়া যায়।


এ ছাড়া ৬১ হিজরির ১০ মহররম কারবালার ময়দানে নবীজির (সা.) দৌহিত্র হজরত হোসাইন ও তার পরিবারের সঙ্গে যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে, তার সঙ্গে শরিয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে আশুরার দিনটির ফজিলতপূর্ণ হওয়ার সম্পর্ক নেই। অবশ্য এ ঘটনার কারণে দিনটি মুসলমানদের কাছে আরো বেশি তাৎপর্যপূর্ণ ও স্মরণীয় হয়ে উঠেছে। হজরত হোসাইনের আত্মত্যাগ ও আপসহীন মানস বিশ্বাসীর অনুপ্রেরণার বাতিঘর। 

Place your advertisement here
Place your advertisement here