• সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ৮ ১৪৩১

  • || ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

Find us in facebook

রাসূলুল্লাহ (সা.) যে নারীর বুদ্ধিমত্তার প্রশংসা করেছিলেন

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৮ মার্চ ২০২৩  

Find us in facebook

Find us in facebook

বিশ্বনবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বিশিষ্ট সাহাবি, মুহাদ্দিস ও সুবক্তা ছিলেন আসমা বিনতে ইয়াজিদ (রা.)। মদিনার নারীদের মধ্যে ইসলাম গ্রহণে তিনি অগ্রগামী ছিলেন। মদিনার নারীরা তাকে প্রতিনিধি হিসেবে মহানবী (সা.) এর কাছে পাঠায় এবং তিনি তার কথা শুনে বুদ্ধিমত্তার প্রশংসা করেন।

আসমা বিনতে ইয়াজিদ (রা.) ছিলেন বিখ্যাত সাহাবি সাআদ বিন মুয়াজ (রা.) এর চাচাতো বোন। আসমা বিনতে ইয়াজিদ (রা.) মদিনায় নিযুক্ত মহানবী (সা.) এর কোরআনের শিক্ষক মুসআব ইবনে উমায়ের (রা.) এর হাতে ইসলাম গ্রহণ করেন। তাবাকাতে ইবনে সাআদের বর্ণনা অনুসারে তিনি ছিলেন নবীজি (সা.) এর কাছে বাইআত গ্রহণকারী তিন নারীর মধ্যে একজন। তিনি নিজেও বলতেন, ‘নারীদের মধ্যে আমিই নবী (সা.) এর হাতে বাইআত গ্রহণ করি।’

নবীজি (সা.) এর প্রশংসা

একবার মদিনার নারীরা আসমা বিনতে ইয়াজিদ (রা.)-কে নিজেদের মুখপাত্র ও প্রতিনিধি বানিয়ে নবীজি (সা.) এর দরবারে প্রেরণ করেন। তিনি নবীজি (সা.) এর কাছে এমন সুন্দর ও যুক্তিপূর্ণ ভাষায় নিজেদের দাবি উত্থাপন করেন যে রাসূলুল্লাহ (সা.) তার হৃদয়গ্রাহী বর্ণনা শুনে সাহাবিদের জিজ্ঞাসা করেন, আসমা বিনতে ইয়াজিদের আগে তোমরা কি কোনো নারীকে দ্বিনের ব্যাপারে এর থেকে উত্তম প্রশ্ন করতে শুনেছ? তারা বললেন, না। (মারিফাতুস সাহাবা, হাদিস: ৭৫১২)

কোরআনের আয়াত অবতীর্ণ

হাদিসের ব্যাখ্যাকাররা বলেন, ইসলামের প্রাথমিক যুগে বিবাহবিচ্ছেদের পর নারীদের ‘ইদ্দত’ পালন করার রীতি ছিল না। অতঃপর আসমা বিনতে ইয়াজিদ (রা.) তালাকপ্রাপ্তা হলে আল্লাহ আয়াত অবতীর্ণ করেন, ‘তালাকপ্রাপ্তা নারী তিন ঋতুস্রাবকাল নিজেদের বিরত রাখবে।’ (সূরা: বাকারা, আয়াত: ২২৮)

আসমা বিনতে ইয়াজিদ (রা.) ছিলেন ইসলামের ইতিহাসে প্রথম ইদ্দত পালনকারী নারী।

বহুমুখী প্রতিভা

আসমা বিনতে ইয়াজিদ (রা.) ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। ঐতিহাসিকরা তার তিনটি বিশেষ প্রতিভার বর্ণনা দিয়েছেন-

১. সুবক্তা: আসমা বিনতে ইয়াজিদ (রা.) ছিলেন অত্যন্ত বাকপটু ও সুবক্তা। আল্লামা ইবনে আসির (রা.) তার ‘উসগুল গাবাহ’ গ্রন্থে এই নারী সাহাবিকে ‘খাতিবাতুন নিসা’ বা নারীদের বক্তা আখ্যা দিয়েছেন। তার জীবনী রচয়িতা বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনার পাশাপাশি নারীদের উপদেশ দিতেন, তাদেরকে দ্বিনি বিধি-বিধান শেখাতেন।

২. সাহসিকতা: আসমা বিনতে ইয়াজিদ (রা.) ছিলেন অত্যন্ত সাহসী নারী। তিনি নবীজি (সা.) এর সঙ্গে খন্দক ও খায়বারের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং হুদাইবিয়ার সন্ধির সময় সফরসঙ্গী হন। উসমান (রা.) এর হত্যার সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে অন্যান্য সাহাবির সঙ্গে তিনিও জিহাদের বাইআত গ্রহণ করেন। মহানবী (সা.) এর ইন্তেকালের পর তিনি মদিনা থেকে শামে হিজরত করেন। সেখানে ইয়ারমুক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মূলত তিনি অন্য নারীদের মতো যুদ্ধাহতদের সেবাযত্ন করেন। ইয়ারমুক যুদ্ধের সময় তাঁবুর খুঁটি দিয়ে আঘাত করে তিনি ৯ জন রোমান সেনা হত্যা করেন।

৩. হাদিস বর্ণনা: আসমা বিনতে ইয়াজিদ (রা.) রাসূলুল্লাহ (সা.) থেকে ৮১টি হাদিস বর্ণনা করেছেন। তার থেকে প্রসিদ্ধ তাবেয়ি ও ইমাম মুসলিম (রহ.) ছাড়া সিহাহ সিত্তার (হাদিসের বিশুদ্ধতম ছয় গ্রন্থ) সব ইমাম হাদিস বর্ণনা করেছেন।

৪. সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞ: আসমা বিনতে ইয়াজিদ ছিলেন সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞ। নারীরা সাজসজ্জা বিষয়ে তার পরামর্শ ও সহযোগিতা গ্রহণ করত। আয়েশা (রা.) যেদিন স্ত্রী হয়ে নবীজি (সা.) এর ঘরে আসেন, সেদিন তিনি তাকে সাজিয়ে দেন।

ইসলামের জন্য আত্মত্যাগ

উহুদ যুদ্ধের সময় আসমা বিনতে ইয়াজিদ (রা.) এর পরিবারের একাধিক সদস্য শহিদ হন। তার ভাই আম্মারা বিন ইয়াজিদ নবী (সা.)-কে শত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করার সময় শহিদ হন। এই যুদ্ধে তার পিতা ইয়াজিদ বিন সাকান, চাচা জিয়াদ বিন সাকান এবং আরেক ভাই আমির বিন জিয়াদ (রা.) শাহাদাত বরণ করেন। পরিবারের এতজন শহিদ হওয়ার পরও তিনি নবীজি (সা.)-কে হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকেন। অতঃপর যখন তাকে খুঁজে পান তিনি বলেন, ‘আপনাকে দেখার পর সব দুঃখই হীন।’

ইন্তেকাল

আসমা বিনতে ইয়াজিদ (রা.) ৬৯ হিজরিতে খলিফা আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ানের শাসনামলে ইন্তেকাল করেন। তাকে দামেস্কের বাবুস সগিরে দাফন করা হয়।

Place your advertisement here
Place your advertisement here