• শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ৬ ১৪৩১

  • || ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

Find us in facebook

ইসলামের দৃষ্টিতে মরণোত্তর অঙ্গদান

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩  

Find us in facebook

Find us in facebook

বর্তমান চিকিৎসা বিজ্ঞান তার স্বর্ণ শিখরে পদার্পণ করেছে। এখন কারো কিডনি নষ্ট হয়ে গেল অথবা চক্ষুদৃষ্টি হারিয়ে ফেলল আরেকজন মৃত ব্যক্তি থেকে কিডনি অথবা চক্ষু স্থানান্তর করে তার মধ্যে প্রতিস্থাপন করা যাচ্ছে। প্রতিস্থাপিত চোখের মাধ্যমে মানুষ এখন দেখতে পায় এবং কিডনি সচল হয়। ডাক্তারি পরিভাষায় এ প্রক্রিয়াকে বলা হয় মরণোত্তর অঙ্গদান বা ক্যাডাভারিক অর্গান ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন। তবে জানার বিষয় হলো মরণোত্তর অঙ্গদানের বিষয়ে ইসলাম কি বলছে?
 
মরণোত্তর অঙ্গদানের বিষয়টি নিয়ে আলেমদের বেশ মতানৈক্য রয়েছে। পূর্বেকার যুগে চিকিৎসার এ পদ্ধতি ছিল না, বর্তমানে তা আবিষ্কৃত হয়েছে। যেহেতু সরাসরি কুরআন-হাদিসে এ বিষয়ের স্পষ্ট কোনো উল্লেখ নেই তাই এ ব্যাপারে সমকালীন ও নিকট অতীতের ফুকাহায়ে কেরামের মধ্যে মতানৈক্য পরিলক্ষিত  হয়। 

সৌদি আরব, মিসর, কুয়েত জর্ডানসহ গোটা আরব বিশ্বের ওলামায়ে কেরাম বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-পর্যালোচনা করেছেন এবং নির্দিষ্ট কিছু শর্তের ভিত্তিতে জায়েজ হওয়ার স্বপক্ষে ব্যক্তি মতামত দিয়েছেন এবং ফিকহী বোর্ড কেন্দ্রিক সম্মিলিত ফতোয়াও প্রকাশ করেছেন। 

ভারত উপমহাদেশের অধিকাংশ মুফতিয়ানে কেরাম নাজায়েজ হওয়ার ফতোয়াই প্রদান করেছেন। তবে কিছু সংখ্যক মুফতিয়ানে কেরাম যুগের চাহিদা, মানুষের প্রয়োজন এবং সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় জায়েজের ফতোয়া দিয়েছেন।  

আমাদের বাংলাদেশের বিজ্ঞ মুফতি ও প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন মুফতি দিলাওয়ার হোসাইন (হাফিযাহুল্লাহু) তার অনবদ্য সংকলন ‘ইসলাম ও আধুনিক চিকিৎসা’য় এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন এবং জায়েজ হওয়ার কথা বলেছেন। 

উল্লেখ্য, যারা জায়েজ বলেছেন তারাও ব্যাপকভাবে নয় এবং সীমিত পরিসরে বিশেষ প্রয়োজনে নির্দিষ্ট শর্ত সাপেক্ষে জায়েজের কথা বলেছেন। সেই সাথে এ বিষয়ে কঠোর সতর্ক বাণী উচ্চারণ করেছেন যে, এই ফতোয়াকে পুঁজি করে মানবাঙ্গের ক্রয়-বিক্রয়ে জড়িত হওয়া, একে বাণিজ্যিক রূপ দেওয়া, মানব পাচার ও লাশ চুরির মতো জঘন্য ও গর্হিত কাজে লিপ্ত হওয়া সম্পূর্ণ হারাম হবে।

যে চক্র এ কাজে জড়িত হবে পরকালে তাদের মহান আল্লাহর দরবারে কঠিন জবাবদিহিতা করতে হবে। তাই এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মহলকে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজনে কঠোর আইন বাস্তবায়ন করতে হবে। 

মরণোত্তর অঙ্গদান যেসব শর্তে জায়েজ

১.যথাসাধ্য চেষ্টা করবে, যেন মুসলমানের অঙ্গ মুসলমানদের শরীরে প্রতিস্থাপিত হয়।
২. কোনো মুসলমানের অঙ্গ কোন কাফেরকে কিছুতেই দেওয়া যাবে না।
৩. অভিজ্ঞ এবং নির্ভরযোগ্য ডাক্তাররা এ কথা বলেন- রোগীর  অকেজো ও বিকল অঙ্গটির স্থানে অন্য কারোর সুস্থ অঙ্গ প্রতিস্থাপন ছাড়া তার পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়।
৪. যার জন্য অঙ্গটি ট্রান্সপ্ল্যান্ট করা হচ্ছে, তার ক্ষেত্রে নিশ্চিত হতে হবে যে, এর দ্বারা লোকটি সুস্থ হয়ে যাবে। 
৫. যার থেকে অঙ্গটি ট্রান্সপ্লান্ট করা হচ্ছে তার মৃত্যুর ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া। এক্ষেত্রে অন্তত তিনজন অভিজ্ঞ দ্বীনদার ডাক্তার তার ডেথ সার্টিফিকেট প্রদান করা।
৬. অঙ্গদানকারী মৃত্যুর পূর্বে সুস্থ থাকা অবস্থায় কোন প্রকারের বাধ্যবাধকতা ছাড়া স্বতঃস্ফূর্ত অঙ্গদানের ওসিয়ত করা।
৭. মৃত্যুর পর অঙ্গ স্থানান্তরের  ব্যাপারে ওয়ারিশগণের পূর্ণ সমর্থন থাকা।
৮. ওসিয়তকৃত অঙ্গটি এমন না হওয়া যার দ্বারা বংশ পরিচিতি মিশ্রণ হয়ে যায়। যেমন পুরুষাঙ্গ কিংবা গর্ভাশয় দান করার ওসিয়ত করা।
৯.অঙ্গ ট্রান্সপ্ল্যান্টশন রাষ্ট্র কর্তৃক অনুমোদিত ও নির্বাচিত অভিজ্ঞ ডাক্তারদের একটি টিমের তত্ত্বাবধানে হওয়া।
১০. কোনো প্রকার আর্থিক লেনদেন না হওয়া।
১১. যদি কোনো মৃত লাওয়ারিশ হয়, তাহলে তার অঙ্গ কিছুতেই ট্রান্সপ্ল্যান্ট করা যাবে না ইত্যাদি।

সূত্র: (ফাতাওয়া উসমানী-৪/২২৩-২২৬) ইসলাম ও আধুনিক চিকিৎসা;১৬৩-১৭৪, ক্বারারাতু মাজাল্লাতি মাজমাইল ফিকহিল ইসলামী, জিদ্দা, সংখ্যা, ৪, খ.১, পৃ.৫০৭, ক্বারার নং (১) ৪/০৮/৮৮,পৃ.৯-১০)

Place your advertisement here
Place your advertisement here