• বৃহস্পতিবার ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ৪ ১৪৩১

  • || ১৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

Find us in facebook

মায়ের মনে কষ্ট দিলে.

দৈনিক রংপুর

প্রকাশিত: ১৪ নভেম্বর ২০১৮  

Find us in facebook

Find us in facebook

মহান রাব্বুল আলামীন আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনুল কারীমে বলেন,

وَقَضَى رَبُّكَ أَلاَّ تَعْبُدُواْ إِلاَّ إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِندَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلاَهُمَا فَلاَ تَقُل لَّهُمَآ أُفٍّ وَلاَ تَنْهَرْهُمَا وَقُل لَّهُمَا قَوْلاً كَرِيمًا

وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ وَقُل رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا

‘তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন, তোমরা তাদের ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করবে না এবং মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়ে যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদের ‘উহ’ শব্দটিও বলবে না এবং তাদের ভর্ৎসনা করবে না। বরং তাদের সঙ্গে সম্মান ও শিষ্টাচারপূর্ণ কথা বলবে এবং বিনয় ও নম্রতাসহকারে তাদের সামনে নত হয়ে থাকবে। আর এ দোয়া করতে থাকবে, হে আমার প্রতিপালক! তাদের উভয়ের প্রতি রহম করো, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন।’ (সূরা: বনি ইসরাঈল, আয়াত: ২৩-২৪)

পবিত্র কোরআনুল কারীমের অপর আয়াতে এসেছে,

وَأَمَّا الْغُلَامُ فَكَانَ أَبَوَاهُ مُؤْمِنَيْنِ فَخَشِينَا أَن يُرْهِقَهُمَا طُغْيَانًا وَكُفْرًا

فَأَرَدْنَا أَن يُبْدِلَهُمَا رَبُّهُمَا خَيْرًا مِّنْهُ زَكَاةً وَأَقْرَبَ رُحْمًا

‘অতঃপর বালকটির ব্যাপারে- তার মা-বাবা ছিল ঈমানদার। আমি আশঙ্কা করলাম, সে অবাধ্যতা ও কুফর দ্বারা তাদের প্রভাবিত করবে। অতঃপর আমি ইচ্ছা করলাম, তাদের পালনকর্তা তাদের তার চেয়েও পবিত্র ও ভালোবাসায় শ্রেষ্ঠতম একটি সন্তান দান করুন। (সূরা: আল কাহাফ, আয়াত: ৮০-৮১)

ব্যাখ্যা: খিযির আলাইহিস সালাম যে বালকটিকে হত্যা করেন, তিনি তার স্বরূপ এই বর্ণনা করেন যে, তার প্রকৃতিতে কুফর ও মা-বাবার অবাধ্যতা নিহিত ছিল। তার মাতা-পিতা ছিল সৎকর্ম পরায়ণ। আমার আশংকা ছিল যে, ছেলেটি বড় হয়ে তার মা-বাবাকে বিব্রত করবে এবং কষ্ট দেবে। সে কুফরে লিপ্ত হয়ে মা-বাবার জন্য বিপদ হয়ে দাঁড়াবে।

জঘন্যতম পাপ:

আবুদুর রহমান ইবন আবু বাকরা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি কি তোমাদের সবচেয়ে জঘন্যতম গুনাহ সম্পর্কে অবহিত করবো না? একথা তিনি তিন বার বললেন। সাহাবায়ে কেরাম বললেন, কেন নয়, অবশ্যই করবেন, হে আল্লাহর রাসুল! তিনি বললেন, ‘আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা, মাতা-পিতার অবাধ্যতা করা। তিনি হেলান দিয়ে বসা ছিলেন, অতঃপর সোজা হয়ে বসে বলতে লাগলেন, (খুব ভালো করে শোন!) মিথ্যা কথা বলা ও মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া। তিনি বারবার একথা বলতে থাকনে। অবশেষে আমরা (মনে মনে) বললাম, হায়! তিনি যদি চুপ হয়ে যেতেন। (সহিহ বুখারি)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমর ইবন হাযম (রা.) এর মাধ্যমে ইয়েমেনবাসীদের নিকট একখানা পত্র প্রেরণ করেছিলেন। তাতে তিনি তাদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালার নিকট সবচেয়ে বড় কবীরা গুনাহ হবে-

১. আল্লাহর সঙ্গে শরিক করা, ২. অন্যায়ভাবে কোনো মুমিনকে হত্যা করা, ৩. আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের ময়দান থেকে পলায়ন করা, ৪. মা-বাবার অবাধ্যতা করা, ৫. সতী নারীর ওপর অপবাদ দেওয়া। ৬. যাদু শিক্ষা করা, ৭. সুদ খাওয়া ও ৮. ইয়াতিমের সম্পদ ভক্ষণ করা। (আত-তরগিব ওয়াত তারহিব)

সাহাবি আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট কবীরা গুনাহের কথা বলা হলে তিনি বলেন, কবীরা গুনাহ হলো- আল্লাহর সঙ্গে শরীক করা ও মা-বাবার অবাধ্য হওয়া। (আল ইহসান)

আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জঘন্যতম কবীরা গুনাহসমূহের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, কোনো ব্যক্তি নিজের মা-বাবাকে লা’নত করা। বলা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! কোনো ব্যক্তি কিভাবে তার মা-বাবাকে লা‘নত করতে পারে? তিনি বললেন, কোনো ব্যক্তি অন্যের পিতাকে গালি দেয়, প্রত্যুত্তরে সেও তার পিতাকে গালি দেয়। অনুরূপভাবে কোনো ব্যক্তি অন্যের মাকে গালি দেয়, এর উত্তরে সেও তার মাকে গালি দেয়। (সহীহ মুসলিম)

আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি গাইরুল্লাহর নামে পশু যবাই করে, যে ব্যক্তি জমির সীমানা বদলে দেয় এবং যে ব্যক্তি নিজের মা-বাবাকে গালি দেয়, আল্লাহ তায়ালা তার প্রতি অভিসম্পাত করেন। (বুখারি)

অবাধ্য সন্তানের জন্য জান্নাত হারাম:

সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তিন শ্রেণির লোকের জন্য আল্লাহ তায়ালা জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন। ১. মাদকাসক্ত ব্যক্তি ২. মা-বাবার নাফরমান ব্যক্তি ও ৩. অসৎ স্ত্রীর স্বামী যে নিজের পরিবারে দুস্কর্মের সমর্থন করে। (ফাতহুর রাব্বানী)

হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, চার শ্রেণির লোককে জান্নাতের নেয়ামত উপভোগ করতে না দেয়া আল্লাহ তায়ালার অধিকার। ১. মদ্যপায়ী, ২. সুদখোর ৩. অন্যায়ভাবে ইয়াতীমের মাল ভক্ষণকারী এবং ৪. মা-বাবার অবাধ্য সন্তান। (আত-তারগিব ওয়াত তারহিব)

জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না যারা:

হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পাঁচশত বছরের রাস্তা থেকে জান্নাতের সুঘ্রাণ পাওয়া যায়। (কিন্তু তিন ব্যক্তি জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না) ১. যে ব্যক্তি দান করে খোঁটা দেয়, ২. মা-বাবার অবাধ্য সন্তান, ৩. যে ব্যক্তি মদপানে অভ্যস্থ। (আত-তারগিব ওয়াত তারহিব)

সাহাবি জাবির ইবন আব্দুল্লাহ (রা.) বলেন, আমরা এক জায়গায় একত্র হয়েছিলাম, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘর থেকে বের হয়ে আমাদের মাঝে এসে বললেন, হে মুসলিম! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক সুদৃঢ় রাখো। কেননা, সম্পর্ক অটুট রাখার চেয়ে দ্রুত কবুলযোগ্য সওয়াবের কাজ আর নেই। আর তোমরা বাড়াবাড়ি ও সীমালঙ্ঘন করো না। সীমালঙ্ঘন করার চেয়ে দ্রুত শাস্তিযোগ্য অপরাধ আর নেই।

তোমরা মা-বাবার নাফরমানী করা থেকে দূরে থাকো। কেননা এক হাজার বছরের রাস্তা থেকে জান্নাতের ঘ্রাণ পাওয়া যায়। আল্লাহর কসম! মা-বাবার অবাধ্য সন্তান, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী, বৃদ্ধ ব্যাভিচারী এবং গর্বভরে টাখনুর নিচে কাপড় পরিধানকারী জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না। (আত-তারগিব ওয়াত তারহিব)

মায়ের নাফরমানিতে কালিমা ভুলে যাওয়া:

আব্দুল্লাহ ইবন আবু আওফা (রা.) বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে উপস্থিত ছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে বলল, একজন যুবকের মুমূর্ষ অবস্থা। লোকজন তাকে কালিমা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ পড়ার উপদেশ দিচ্ছে, কিন্তু সে পড়তে পারছে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, এ ব্যক্তি কি নামাজ আদায় করতো? সে বলল, জি হ্যাঁ। একথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উঠে যুবকটির উদ্দেশে রওয়ানা করলেন।

আমরাও রাসূল (সা.) এর সঙ্গে চললাম। রাসূল (সা.) যুবকের কাছে গিয়ে তাকে কালিমা পড়ার তালকিন দিলেন অর্থাৎ বললেন, বল, ‘লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ সে বলল, আমি বলতে পারছি না। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, কেন, কি হয়েছে? লোকটি বলল, সে তার মায়ের সঙ্গে নাফরমানী করত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, তার মা কি জীবিত আছে? লোকেরা বলল, হ্যাঁ, জীবিত আছেন। রাসূল (সা.) তাকে ডেকে আনার নির্দেশ দিলেন। তার বৃদ্ধ মা এলে রাসূল (সা.) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, একি তোমার ছেলে? বৃদ্ধা বলল হ্যাঁ, আমার ছেলে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বৃদ্ধাকে বললেন, তুমি কি মনে করো, যদি একটা ভয়ংকর আগুন প্রজ্জ্বলিত করা হয় এবং তোমাকে বলা হয়, যদি তুমি ছেলের জন্য সুপরিশ করো তাহলে তাকে এ আগুন থেকে নিষ্কৃতি দেয়া হবে। অন্যথায় তাকে এ আগুনে ফেলে পুড়িয়ে মারা হবে। এ অবস্থায় তুমি কি সুপারিশ করবে?

বৃদ্ধা বলল, জি, হ্যাঁ, সুপারিশ করব। একথা শুনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে তুমি আল্লাহ ও আমাকে সাক্ষী রেখে বলো, তুমি তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে বলছো। বৃদ্ধা বললো, হে আল্লাহ! আমি তোমাকে এবং তোমার রাসূল (সা.)-কে সাক্ষী রেখে বলছি, আমি আমার কলিজার টুকরা সন্তানের প্রতি রাজী হয়ে গেছি।

তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুবকটির প্রতি লক্ষ করে বললেন, বলো ‘লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহু লা-শারীকা লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবুদুহু ওয়া রাসুলুহু’ (সন্তানের প্রতি মায়ের সন্তুষ্টির বরকতে যুবকটির মুখ খুলে গেলো এবং তৎক্ষণাত) সে কালিমা পাঠ করল।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি আমার অসিলায় এ যুবককে জাহান্নামের কঠিন আজাব থেকে নাজাত দিয়েছেন।

ধ্বংস যাকে ডাকছে:

সাহাবি হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তার নাক ধুলি মলিন হোক! তার নাক ধুলি মলিন হোক। তার নাম ধুলি মলিন হোক (অর্থাৎ সে ধ্বংস হোক) জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! কে সে? তিনি বললেন, যে ব্যক্তি মাতা-পিতা উভয়কে অথবা তাদের কোনো একজনকে বার্ধক্য অবস্থায় পেলো অথচ সে জান্নাতের প্রবেশ করল না। (সহহিহ মুসলিম)

কা‘ব ইবন উজরা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা মিম্বরের কাছে জামায়েত হও। আমরা সকলে মিম্বরের কাছে জামায়েত হলাম। তিনি মিম্বরের প্রথম ধাপে আরোহণ করে বললেন, আমিন। দ্বিতীয় ধাপে আরোহণ করে পুনরায় বললেন আমিন। তৃতীয় ধাপে আরোহণ করে আবারও বললেন, আমিন।

রাসূলুল্লাহ (সা.) মিম্বার থেকে অবতরণ করার পর আমরা তাঁর নিকট আরজ করলাম, আজ আমরা আপনার কাছ থেকে এমন কিছু কথা শুনেছি যা ইতোপূর্বে কখনও শুনিনি।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, জিবরাঈল আমাকে এসে বললেন, সে ব্যক্তি ধ্বংস হোক, যে রমজান মাস পেয়েছে, অথচ তার গুনাহ মাফ হয়নি। আমি বললাম আমিন (আল্লাহ কুবল করুন)। আমি দ্বিতীয় ধাপে আরোহণ করলে জিবরাঈল বললেন, সে ব্যক্তি ধ্বংস হোক, যার সামনে আমার নাম উচ্চারণ করা হলো, অথচ সে দরুদ পড়ল না। আমি বললাম, আমিন। আমি মিম্বারের তৃতীয় ধাপে আরোহণ করলে জিবরাঈল বললেন, সে ব্যক্তি ধ্বংস হোক, যে মাতা-পিতা উভয়কে অথবা তাদের কোনো একজনকে পেল, কিন্তু তারা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করালো না। আমি বললাম, আমিন। (আল মুস্তাদরাক)

Place your advertisement here
Place your advertisement here