• রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • ভাদ্র ২৪ ১৪৩১

  • || ০৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

Find us in facebook

ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর মুখে কলেজছাত্র মিলন

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৬ জুলাই ২০২৪  

Find us in facebook

Find us in facebook

পঞ্চগড়ের তেতুঁলিয়া উপজেলার কলেজছাত্র মামুনুর রশিদ মিলন (২২)। কাঠমিস্ত্রি বাবা আর গৃহিণী মায়ের একমাত্র ছেলের স্বপ্ন ছিল বিসিএস করে সরকারি চাকরি করবেন। পরিবারের মুখে হাসি ফোটাবেন, ধরবেন সংসারের হাল, লাঘব করবেন মা-বাবা কষ্ট। সেই স্বপ্ন আজ থমকে আছে। মিলন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত। বাঁচার আকুতি জানিয়ে বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে রংপুরের কারমাইকেল কলেজে ব্যবস্থাপনা বিভাগে অনার্সে ভর্তি হন মামুনুর রশিদ মিলন। অন্য বন্ধুদের মত করেই প্রতিদিন সময়মত কলেজে যেতেন। ক্লাস শেষে ছাত্রাবাসে ফিরতেন সময়মতো। পড়াশোনার ফাঁকে বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলা, আড্ডা দেওয়াসহ হাসিখুশি চলাফেরা করতেন তিনি। এভাবেই কলেজে প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষ কাটে তার। তবে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুর দিকে শারীরিক অসুস্থতা অনুভব করায় রংপুর থেকে বাসায় চলে আসেন মিলন। বাসায় ফিরে প্রায় সময় ঘরে শুয়ে থাকতেন। পরে বাবা-মাকে নিজের শারীরিক দুর্বলতার কথা জানালে মা প্রতিবেশীদের কাছ থেকে নিজেদের সাধ্যমত দুধ ও ডিম কিনে একমাত্র ছেলেকে খাওয়ানো শুরু করেন। এরই মাঝে কেটে যায় দুই সপ্তাহ। পরে একদিন মিলনের মা তাকে নিয়ে যান অন্যের মরিচক্ষেতে কাজ করতে। কাজের শুরু থেকে কিছুক্ষণ পরপর হাঁপিয়ে উঠছিলেন আর ক্ষেতের আইলে বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন মিলন। একপর্যায়ে আর কাজ করতে পারছিলেন না তিনি। তরুণ ছেলে একটু কাজেই কেন হাঁপিয়ে উঠছেন মায়ের সন্দেহ হয়।

পরে তাকে ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের সাবেক চিকিৎসক সিদ্দিকুর রহমানের কাছে তাকে নেয়া হয়। এ সময় তিনি মিলনের রক্ত স্বল্পতার কথা জানিয়ে দ্রুতই ৫ ব্যাগ রক্ত দিতে বলেন। পরে বাসায় নিয়ে তাকে শারীরিক দুর্বলতার কারণে পল্লী চিকিৎসকের মাধ্যেমে স্যালাইন দেওয়া হয়। তবুও কাটেনি তার শারীরিক দুর্বলতা। তখনও মিলনসহ পরিবারের কেউই আঁচই করতে পারেননি যে মিলনের শরীরে ক্যান্সার বাসা বেঁধেছে। কিছুই বুঝতে পারছিলেন বাবা-মা। কি করবেন একমাত্র ছেলেকে নিয়ে। কোথায় গেলে কাটবে ছেলের শারীরিক দুর্বলতা। পরে চিকিৎসক সিদ্দিকুর রহমানের পরামর্শে নিজেদের হাতে থাকা কিছু টাকা ও ধারদেনা করে গত ফেব্রুয়ারি মাসের ২০ তারিখে নেয়া হয় রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আব্দুল কাদের জিলানীর কাছে।

সেখানে সব সমস্যার কথা জানালে বেশকিছু স্বাস্থ্য পরীক্ষা দেওয়া হয় মিলনের। এক পর্যায়ে শনাক্ত হয় মিলন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে। এ কথা শোনা মাত্রই আকাশ থেকে পড়েন পরিবারের সদস্যরা। পরে প্রতি সপ্তাহে এক বা দুই ব্যাগ করে অন্তত তিন মাস রক্ত দিতে পরামর্শ দেন চিকিৎসক। পরে তেতুঁলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করিয়ে পর্যায়ক্রমে ১২ ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়। এরপরেও আবারো তাকে চিকিৎসক আব্দুল কাদের জিলানীর কাছে নেয়া হলে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। সেখানে মিলনকে ভর্তি করানো হলে তার সম্পূর্ণ চিকিৎসা খরচ চাওয়া হয় ১৪ লাখ টাকা। এতেও সুস্থ হবেন কি-না নিশ্চয়তা দেয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

পরে বাসায় ফিরে আবারো চিকিৎসক আব্দুল কাদের জিলানীর কাছে নেয়া হলে তিনি কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। পরে বাসায় ফিরে মিলনের চিকিৎসা খরচ যোগাতে তার বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে স্থানীয় হাট বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ বিভিন্ন স্থানে আর্থিক সাহায্য তোলেন পরিবারের সদস্যরা। পরে তাকে ভারতের সরোজ গুপ্ত ক্যান্সার সেন্টার অ্যান্ড রিসার্চ ইন্সিটিটিউটে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ডা. মৌপালি ঘোষ ও ডা. পিপি গুপ্তার তত্ত্বাবধানে নিজেদের শেষ সম্বল, ঋণ করে ও সাহায্যর টাকা দিয়ে শুরু হয় চিকিৎসা। শুরুতে চিকিৎসা খরচ বাবদ ১৪ লাখ ভারতীয় রুপি চাওয়া হয়। তাতেও রোগমুক্তি মিলবে কিনা নিশ্চয়তা দেওয়া হয়নি। পরে চিকিৎসার শুরুতে একটি কেমোথেরাপি দেওয়া হয় মিলনকে।

কেমোথেরাপির পরে যদি অস্থিমজ্জার ক্যান্সার ৫ শতাংশের নিচে আসে তাহলে পরবর্তী চিকিৎসার জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ৩টি সাইকেল কেমোথেরাপি দিতে হবে বলে জানানো হয়। পরে একটি সাইকেল কেমোথেরাপি দেওয়া হয়। তবে এখনো শঙ্কামুক্ত নন তিনি। তবে এরই মাঝে ভারতে চিকিৎসা বাবদ খরচ হয়েছে প্রায় ১২ লাখ টাকা। বর্তমানে মিলনকে আরো দুইটি সাইকেল কেমোথেরাপি দিতে প্রয়োজন আরো তিন লাখ টাকা। পরে শারীরিক অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল হলে অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনের জন্য প্রয়োজন হবে আরো প্রায় ১৫ লাখ টাকা।

মিলনের বড় বোন মমতাজ বেগম বলেন, আমাদের ভিটেমাটি ছাড়া কোনো জমি নেই। আমার বাবার দৈনিক কাজের টাকায় আমাদের সংসার চলে। নিজেদের কিছু জমানো টাকা, বিভিন্ন স্থানে আর্থিক সাহায্য তুলে ও ঋণ করে দেশে ও ভারতে প্রায় ১৪ লাখ টাকা খরচ হয়েছে আমার ভাইয়ের চিকিৎসার পেছনে। এখনো তার পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা খরচ বাবদ আরো প্রায় ১৫ লাখ টাকার প্রয়োজন। আমার ভাইকে বাঁচাতে সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান করছি।

তেতুঁলিয়ারি ইউএনও ফজলে রাব্বী বলেন, পরিবারের লোকজন উপজেলা সমাজসেবা অফিসে আর্থিক সাহায্যের আবেদন করলে আমরা উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যেমে সহযোগিতা অবশ্যই করবো।

মিলনের বাড়ি পঞ্চগড়ের তেতুঁলিয়া উপজেলার শালবাহান বাজার এলাকায়। তার বাবা মহব্বত আলী পেশায় একজন কাঠমিস্ত্রি। আর মা মর্জিনা বেগম গৃহিণী। দুই ভাই-বোনের মধ্যে মিলন ছোট।

Place your advertisement here
Place your advertisement here