• রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • ভাদ্র ২৪ ১৪৩১

  • || ০৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

Find us in facebook

গাইবান্ধায় পানিবন্দি ২০ হাজার পরিবার, বন্ধ ৮০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৭ জুলাই ২০২৪  

Find us in facebook

Find us in facebook

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল এবং টানা কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টির ফলে গাইবান্ধায় তিস্তা নদী ছাড়া সবগুলো নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে জেলার সদর, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলাসহ চার উপজেলা। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে চার উপজেলার ২৪টি ইউনিয়নের অন্তত ২০ হাজার পরিবার। পানিতে তলিয়ে গেছে আউশ ধান, পাট, ভুট্টা ও আমন বীজতলা। এছাড়া তলিয়ে গেছে পুকুর ও মাছের ঘের। বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে জেলার ৮০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

গাইবান্ধার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, শুক্রবার বেলা ১২টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি জেলার ফুলছড়ি উপজেলার তিস্তামুখ পয়েন্টে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩১ সেন্টিমিটির বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৮৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া ঘাঘট নদীর পানি জেলা শহরের নতুন ব্রিজ পয়েন্টে ৩৫ সে.মি. বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৪৪ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

অপরদিকে, জেলার করতোয়া নদীর পানি গোবিন্দগঞ্জের কাটাখালি পয়েন্টে গত ২৪ ঘণ্টায় ২৯ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেলেও বিপদসীমার ১৪৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে এবং তিস্তা নদীর ২৮ সে.মি কমে বিপদসীমার ৬১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

গাইবান্ধার যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার চার উপজেলার নিম্নাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী এলাকায় এরমধ্যে বন্যা দেখা দিয়েছে। চার উপজেলার ২৪টি ইউনিয়নের প্রায় ২০ হাজার (সরকারি হিসেবে) মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

জেলা প্রশাসনের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত গাইবান্ধার সদর উপজেলার ২টি ইউনিয়ন, সুন্দরগঞ্জে ৭টি, সাঘাটা উপজেলায় ৮টি ও ফুলছড়ি উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন পানবন্দি হয়ে পড়েছে। এই ২৪ ইউনিয়নে পানিবন্দি ১৭ হাজার ৮২০টি পরিবার। এরমধ্যে গাইবান্ধা সদর উপজেলায় ২ হাজার ১৫০টি , সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ৪ হাজার ৭০০টি, সাঘাটা উপজেলায় ৫ পাঁচ হাজার ১৭০টি ইউনিয়ন ও ফুলছড়ি উপজেলার ৬ হাজার ৮০০টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। যদিও স্থানীয়দের দাবি বাস্তবে পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা আরো বেশি।

পানিবন্দি মানুষের জন্য স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে মোট ১৮১টি আশ্রয় কেন্দ্রের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এরমধ্যে সাঘাটা উপজেলায় রয়েছে ৩৬টি, সুন্দরগঞ্জে ৪৮টি, ফুলছড়িতে ২৩টি, সদরে ২৪টি, সাদুল্লাপুরে ৩৩টি, পলাশবাড়ীতে ৬টি ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় ১১টি আশ্রয় কেন্দ্রের ব্যবস্থা রয়েছে।

এদিকে, চার উপজেলার বন্যাকবলিত এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠে ও বিদ্যালয়ের ভেতরে বন্যার পানি ওঠায় এরমধ্যে সদর উপজেলার ১৭টি বিদ্যালয়, ফুলছড়িতে ১৪টি, সাঘাটায় ২১টি এবং সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ১১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ জেলার মোট ৭০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ। এছাড়াও সাতটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং তিনটি দাখিল মাদরাসার শিক্ষা কার্যক্রমও বন্ধ ঘোষণা করেছে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বিভাগ।

বৃহস্পতিবার দুপুরে পানিবন্দি এসব এলাকার মধ্যে ফুলছড়ি উপজেলার ফুলছড়ি, কঞ্চিপাড়া, উড়িয়া ও ফজলুপুর ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বন্যায় পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে বাড়ি-ঘর, ফসলি জমি। এসব এলাকার চারদিকেই পানি থৈ থৈ করছে। নিম্নাঞ্চলের সাথে নদী তীরবর্তী এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়েছে পড়েছে। শিশু-বৃদ্ধ ও গবাদিপশু নিয়ে তারা ধীরে ধীরে বিপদের সম্মুখীন হচ্ছেন। পানিবন্দি মানুষদের নৌকাযোগে চলাচল করতে দেখা গেছে। গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন পানিবন্দি এসব পরিবারগুলো। এসব এলাকার পাট, আউশ ক্ষেত পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় নদী ভাঙনে পাট, ভুট্টা, বাদাম, আউশক্ষেতসহ বিভিন্ন ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলিন হচ্ছে বলে জানা গেছে।

ফজলুপুর ইউনিয়নের মানিক মিয়া বলেন, গত তিনদিন থেকেই নদীতে পানি বাড়ছেই। পানিবন্দি হয়ে গবাদি পশু, শিশু-বৃদ্ধদের নিয়ে নানা সংকটে দিন যাচ্ছে আমাদের। বন্যায় পাট, ভুট্টা আউশ ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। টিউবয়েল পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় বর্তমানে বিশুদ্ধ পানির সংকট পড়েছি আমরা।

গজারিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান খোরশেদ আলী খান বলেন, বর্তমানে এই ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। শুধু গজারিয়ায় নয় পানিবন্দি সব এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট হয়েছে।

গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক খোরশেদ আলম মোবাইল ফোনে জানান, চলমান বন্যায় এরমধ্যে চার উপজেলায় ২ হাজার ৫৪৫ হেক্টর জমির আউশ ধান, পাট, ভুট্টা, বীজতলা ও শাক-সবজি পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। যদি দ্রুত পানি নেমে যায় তাহলে সেসব ক্ষতির আশঙ্কা কম রয়েছে। আর যদি বন্যা স্থায়ী হয় কিংবা আরো বাড়ে তাহলে কী পরিমাণ ফসল নষ্ট হবে তা পরবর্তীতে জানা যাবে।

গাইবান্ধা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম মোবাইল ফোনে বলেন, জেলার বন্যাকবলিত চার উপজেলার অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চারদিকেই থৈ থৈ পানি। এরমধ্যে কিছু স্কুলের মাঠে ও শ্রেণিকক্ষে পানি ঢুকে পড়েছে এবং কিছু এলাকায় রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় বিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। ফলে ওইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা কেউই স্কুলে যেতে পারছে না। যার কারণে সেইসব বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেই বা পানি নেমে গেলেই পূর্বের ন্যায় সব বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম চালু হবে।

গাইবান্ধার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাফিজুল হক জানান, উজানের ঢলে অব্যাহত পানি বৃদ্ধির ফলে ঘাঘট ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এরমধ্যে সুন্দরগঞ্জ, সদর, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার নিম্নাঞ্চলসহ বেশ কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে বন্যা পরিস্থিতি আরো কিছুটা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সার্বিক পরিস্থিতির উপর সার্বক্ষণিক নজর রাখছে এবং পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

Place your advertisement here
Place your advertisement here