• শুক্রবার ১৮ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • কার্তিক ২ ১৪৩১

  • || ১৩ রবিউস সানি ১৪৪৬

Find us in facebook

রংপুরে স্বল্পমেয়াদি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৩৯ প্রাথমিক বিদ্যালয়

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২ জুলাই ২০২৪  

Find us in facebook

Find us in facebook

রংপুর বিভাগে ঈদুল আজহার আগে হয়ে যাওয়া স্বল্পমেয়াদি বন্যায় ৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ওই পাঁচটি বিদ্যালয়ের কিছু অবকাঠামো অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া গেলেও রক্ষা হয়নি বিদ্যালয়ের জমি। এছাড়াও এ বন্যায় বিভাগের প্রায় ৩৯টি বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

এদিকে নতুন করে আবারও বৃষ্টিপাত শুরু হওয়ায় রংপুর বিভাগের নদ-নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার কোলকোন্দ ইউনিয়নের চিলাখাল সূর্যমূখী ক্বারী মাদরাসা, চিলাখাল মধ্যপাড়া জামে মসজিদ, উত্তর চিলাখাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে।

প্রাথমিক শিক্ষা রংপুর বিভাগের উপ-পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিভাগের ৮ জেলার মধ্যে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম এবং গাইবান্ধার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, দুধকুমার, করতোয়া ও যমুনাসহ বিভিন্ন নদ-নদী বছরের বর্ষাকালে (আষাঢ় ও শ্রাবণ মাস) উজানের পানি এবং অতিবৃষ্টিতে আগ্রাসী রূপ নেয়। ফলে প্রতিবছর নদ-নদী সংলগ্ন চরে অবস্থিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিশেষ করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

সাম্প্রতিক সময়ে হয়ে যাওয়া স্বল্পমেয়াদি বন্যায় গাইবান্ধা জেলায় ৩টি চর উপযোগী বিদ্যালয়ের টিনের তৈরি বেড়া-ছাদসহ বিভিন্ন শিক্ষাউপকরণ অন্যত্র সরিয়ে নিলেও পাকা মেঝেসহ বিদ্যালয়ের জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।

বিদ্যালয়গুলো হলো- সাঘাটা উপজেলার দীঘলকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পাতিলবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ভাটি বুড়াইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এছাড়াও বন্যায় জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরও ১১টি বিদ্যালয়।

কুড়িগ্রাম জেলায় ২টি বিদ্যালয়ের অবকাঠামো (ছাদ ও দেয়াল) রক্ষা পেলেও বিদ্যালয়ের পাকা মেঝে ও  জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। বিদ্যালয় দুটি হলো- উলিপুর উপজেলার চর গুজিমারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ১ নং খামার দামার হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বন্যায় জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২০টি বিদ্যালয়। এছাড়াও বন্যায় রংপুর জেলায় ২টি এবং লালমনিরহাট জেলায় ৬টি বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার পাতিলবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক মাহবুবর রহমান বলেন, যমুনা নদীর ভাঙন থেকে রক্ষা পেতে এক বছরে তিনবার বিদ্যালয়ের অবকাঠামো সরাতে হয়েছে। শুধু তাই নয় উপজেলায় দিঘল বাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও শুধু এবছর নয়, গত বছরও নদী ভাঙন থেকে রক্ষা পেতে অবকাঠামো সরিয়ে নিয়েছিল। কিন্তু প্রতিবারই বিদ্যালয়ের পাকা মেঝে এবং জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

একই উপজেলার কাপাসিয়া ইউনিয়নের কেরানীর চর এলাকার ভাটি ভুড়াইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল মালেক জানান, তার বিদ্যালয়ের ৯টি কক্ষের অবকাঠামো তিস্তা নদীর ভাঙন থেকে রক্ষার্থে সরানো হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য নতুন ৫টি কক্ষের কেবল ২টি ব্যবহার করতেন। বাকিগুলো ব্যবহার করার সুযোগ পাননি।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তিনি বিদ্যালয়ের অবকাঠামো সরানোর জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু বিষয়টি কর্ণপাত করা হয়নি। 

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আমির হোসেন বলেন, বর্তমানে নদী তীরবর্তী প্রান্তিক চরগুলোতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য বিশেষ ধরনের অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়। যাতে দুর্যোগ মোকাবেলায় টিনের চাল, টিনের বেড়া খুলে অন্যত্র নেওয়া যায়। তবে বিদ্যালয়ের জমি রক্ষা করা সম্ভব হয় না। উলিপুরে চর গুজিমারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ১নং খামার দামারহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবকাঠামো অপসারণ করতে হয়েছে বলেও তিনি জানান।

একাধিক ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে চরের উপযোগী করে বিদ্যালয়ের স্থাপনা নির্মাণ করা হয়। যাতে নদীর ভাঙনের আশঙ্কা থাকলে তা সরিয়ে নেওয়া যায়। তাও এই স্থাপনাগুলো তৈরি করতে অবকাঠামোর ওপর নির্ভর করে সর্বনিম্ন ১৫ লাখ টাকা থেকে শুরু করে ৩০ লাখ টাকার ঊর্ধ্বে খরচ হয়। 

তারা দাবি করেন, যদি স্থাপনাগুলোর মেঝে ইট সিমেন্ট দিয়ে স্থায়ীভাবে না বানিয়ে কাঠের পাটাতন তৈরি করা যায় তাহলে এগুলো খুলে আনা সম্ভব। তাছাড়া টিনের সঙ্গে যে লোহার এ্যাংগেল ব্যবহার করা হয় জরুরিভিত্তিতে তা খুলতে এবং চর এলাকায় বহন করতে বেশ সমস্যায় পড়তে হয়। তাই এগুলো যদি মানসম্পন্ন কাঠ ব্যবহার করা হয় তাহলে তা সহজে অন্যত্র সরিয়ে নিতে সুবিধা হতো। পাশাপাশি সরকারের অর্থ সাশ্রয় হবে।

এ বিষয়ে তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানি বলেন, অসময়ের বন্যা ও ভাঙনে প্রতি বছর এক লাখ কোটি টাকার সম্পদ তিস্তার গর্ভে চলে যায়। এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য নদীখনন, সংরক্ষণ ও তিস্তা মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন করা ছাড়া বিকল্প নেই।

প্রাথমিক শিক্ষা রংপুর বিভাগের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, উজানের ঢলসহ টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্ট স্বল্পমেয়াদি বন্যায় নদীর ভাঙনের শিকার কিছু বিদ্যালয়ের স্থাপনা নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। অনেক বিদ্যালয় এখনও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় মুখে রয়েছে। তাই চরগুলোতে মরিটরিং করা হচ্ছে। যাতে জরুরি প্রয়োজনে যে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া যায়। 

তিনি আরও বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয়গুলোতে বিকল্প ব্যবস্থায় যাতে লেখাপড়া চালিয়ে নেওয়া যায়, সেজন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয়গুলোর সংস্কারে আর্থিক সহায়তার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে অবগত করা হয়েছে।

এদিকে মঙ্গলবার দুপুরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যার পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, দেশের উত্তরাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন উজানে আগামী ২৪ ঘণ্টায় ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। এসময় তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীসমূহের পানি সমতল সময় বিশেষে বৃদ্ধি পেয়ে কতিপয় পয়েন্টে স্বল্পমেয়াদে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। 

সূত্র আরও জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চলের উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত হয়েছে। এরমধ্যে পাটেশ্বরীতে (কুড়িগ্রাম) ১৪২ মিলিমিটার, দেওয়ানগঞ্জে (জামালপুর) ১৪০ মিলিমিটার, চিলমারীতে (কুড়িগ্রাম) ১৩০ মিলিমিটার, কুড়িগ্রামে ১১৯ মিলিমিটার, কাউনিয়ায় (রংপুর) ১০৬ মিলিমিটার, রংপুরে ৯৮ মিলিমিটার, বদরগঞ্জে (রংপুর) ৭১ মিলিমিটার, ডালিয়া (রংপুর) ৬৮ মিলিমিটার, পঞ্চগড়ে ৬৭ মিলিমিটার এবং গাইবান্ধায় ৭১.৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

একই সময়ে ভারতের উজানে পশ্চিমবঙ্গের কুচবিহারে ১২৭ মিলিমিটার, দার্জিলিংয়ে ১২৩ মিলিমিটার, কালিমপংয়ে ৯৭ মিলিমিটার, শিলিগুড়িতে ৬৮ মিলিমিটার, জলপাইগুড়িতে ৩২ মিলিমিটার,আসামের ধুব্রিতে ৯৯ মিলিমিটার এবং গোয়ালপাড়ায় ৬৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।

রংপুর বিভাগীয় কমিশনার জাকির হোসেন বলেন, উজানে ভারী বৃষ্টিপাত পাহাড়ি ঢলের কারণে উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা, ঘাঘট, করতোয়া, ব্রহ্মপুত্রসহ সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত বন্যার আভাস পাওয়া যায়নি। তারপরও সরকারিভাবে সব ধরনের আগাম প্রস্তুতি নেওয়া আছে, যাতে বন্যায় কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক নদীপাড়ের পরিস্থিতির খোঁজখবর রাখা হচ্ছে।

Place your advertisement here
Place your advertisement here