• রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ৬ ১৪৩১

  • || ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

Find us in facebook

বোনের বিয়ের জন্য জমানো টাকা পুড়ে গেল নওসিনের                     

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩  

Find us in facebook

Find us in facebook

 
পরিবারের সচ্ছলতা ফেরাতে ও নিজের পড়াশোনার খরচ যোগাতে প্রায় পাঁচ বছর আগে রেস্টুরেন্টে চাকরি নেন নওসিন আক্তার। সেখান থেকে গত মাসের বেতন তুলে এক টাকাও খরচ করতে পারেননি তিনি। ভয়াবহ এক অগ্নিকাণ্ডে বেতনের সব টাকা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

এদিকে কয়েক দিন পর তার বড় বোনের বিয়ে। দরিদ্র বাবা-মা অনেক কষ্টে মেয়ের বিয়েতে খরচ করতে কিছু টাকা জমান। আর পাঁচ বছর ধরে খরচের পাশাপাশি বেতনের কিছু টাকা মায়ের কাছে জমা রেখেছিলেন নওসিন। তবে বিয়েতে খরচ ও মায়ের কাছে নওসিনের জমানো সেই টাকাসহ সব হারিয়ে দিশেহারা তার বাবা-মা।

নওসিন আক্তার নীলফামারীর সৈয়দপুরের মুন্সিপাড়ার বাসিন্দা মো. কায়সার ও ইয়াসমিন দম্পতির মেয়ে। তিনি রংপুর মডেল কলেজের সম্মান (অনার্স) ৩য় বর্ষের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী ও শহরের একটি রেস্টুরেন্টে ম্যানেজার পদে কর্মরত। সাত বোনের মধ্যে নওসিন ষষ্ঠ। চার বোনের বিয়ে হয়েছে। সম্প্রতি নওসিনের বড় বোন চাঁদনী আক্তারের বিয়ের দিন-তারিখ ঠিক করার কথা চলছিল। এর মধ্যে গত শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় ভয়াবহ এক অগ্নিকাণ্ডে তাদের বাড়িসহ রেলওয়ের পাঁচটি কোয়ার্টার পুরোপুরি পুড়ে যায়।

নওসিন আক্তার বলেন, সাত বোনের মধ্যে চারজনের বিয়ে হয়েছে। আমরা তিন বোন আছি। আমার যে বড় তার বিয়ে ছিল ঈদের পরে, তবে তারিখ এখনো ঠিক করা হয়নি। সেজন্য আমরা যেসব টাকাপয়সা জমা করে বাড়িতে রেখেছিলাম তা পুড়ে গেছে। আমি পাঁচ বছর ধরে চাকরি করি। বেতনের টাকা আমি কিছু খরচ করতাম আর কিছু আম্মুকে দিতাম। আম্মু তা বক্সের ভেতর রাখত। আমার ব্যাংক ব্যালেন্স কিছু নেই। বোনের বিয়ের জন্য রাখা আনুমানিক দুই লাখ টাকা পুড়ে গেছে। আম্মু সব হারিয়ে পাথর হয়ে গেছেন। ঠিকভাবে কথা বলছেন না।

তিনি আরও বলেন, আমার সব বই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। মার্চের শেষ দিকে হয়ত আমার অনার্স তৃতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষার তারিখ দেবে। আমার ঘরের কোনো কিছু বাচাঁতে পারিনি। সবচেয়ে বেশি খারাপ লাগছে, আমার কষ্টের বেতনের টাকাও পুড়ে গেল। মোট সাড়ে ১৫ হাজার টাকার মতো ছিল আমার ব্যাগে, সব পুড়ে গেছে। আমার তো জমানো কোনো টাকা নেই যে, আমি বাসাটা আবার বানাব বা অন্য কিছু করবো। সহযোগিতা বলতে মেয়র সাহেব এসেছিলেন, উনি ১০ হাজার দিয়েছেন। তাছাড়া কোনো সহযোগিতা পাইনি। সরকারের কাছে চাওয়া যেন, কোনো সাহায্য পাই। তাহলে আমাদের খুব উপকার হবে।

নওসিনের বাবা মো. কায়সার বলেন, ঘর থেকে কোনো জিনিস বের করতে পারিনি। মেয়ের বিয়ের জন্য টাকা রেখেছিলাম, তাও পুড়ে গেছে। এখন সরকার যদি কোনো সাহায্য করে তাহলে চলতে পারব।

সৈয়দপুর পৌরসভার মেয়র রাফিকা আক্তার জাহান বেবি বলেন, আমরা প্রতি পরিবারকে ১০ হাজার করে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করেছি। তাদের খাওয়া-দাওয়া ও রান্নার জন্য যেসব জিনিস প্রয়োজন, সব দেওয়া হবে। এছাড়া তাদের পুনর্বাসনের বিষয়ে মিটিং করা হবে।

সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফয়সাল রায়হান বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শীতবস্ত্র ও শুকনা খাবার প্রদান করা হয়েছে। কয়েকজন শিক্ষার্থীর বই পুড়ে গেছে। তাদের পড়াশোনা ও পুনর্বাসনের জন্য সেখানে যাব। ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের আওতায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে পুনর্বাসন করা হবে।

সৈয়দপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সিনিয়র স্টেশন কর্মকর্তা খুরশীদ আলম বলেন, প্রাথমিকভাবে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি করলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও অগ্নিকাণ্ডের সঠিক কারণ জানা যাবে।

প্রসঙ্গত, নীলফামারীর সৈয়দপুরের মুন্সিপাড়ায় শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ওই এলাকার জাহেদা বেগমের বাড়ি থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। এদিন দুপুরে তার বাড়ির অন্যান্য সদস্যরা বাইরে বেড়াতে যান। বাড়িতে একাই ছিলেন জাহেদা বেগম। বিকেলের দিকে হঠাৎ বাড়িতে আগুন দেখতে পান তিনি। পরে তার চিৎকারে স্থানীয়রা আগুন নেভানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এরই মধ্যে আগুন পাশের বাড়িগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ে। পরে খবর পেয়ে স্থানীয় ফায়ার সার্ভিসসহ নীলফামারী, উত্তরা ইপিজেড ও রংপুরের তারাগঞ্জের ছয়টি ইউনিটের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে দুই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুনে এলাকার রেলওয়ের পাঁচটি কোয়ার্টার পুরোপুরি পুড়ে গেছে। এছাড়া পাশের আরও সাতটি বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ওই এলাকায় থাকা আজমেরী ট্রেডার্স এবং আকরাম এন্টারপ্রাইজ নামের একটি স্যানিটারি ও একটি হার্ডওয়্যার দোকানের গুদামের মালামালও ভস্মীভূত হয়েছে।

সূত্র-ঢাকা পোস্ট

Place your advertisement here
Place your advertisement here