• মঙ্গলবার ২২ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • কার্তিক ৬ ১৪৩১

  • || ১৭ রবিউস সানি ১৪৪৬

Find us in facebook

উজানের ঢলে প্লাবিত উত্তরের ৪ জেলা

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪  

Find us in facebook

Find us in facebook

এখনো কাটিয়ে ওঠা যায়নি ফেনী-নোয়াখালী অঞ্চলের বন্যার ক্ষতি। এরই মধ্যে দেশের আরেক প্রান্তে দেখা দিয়েছে বন্যা পরিস্থিতি। উজানের ঢল ও টানা ভারী বৃষ্টিতে এবার পানি বেড়েছে তিস্তায়। এতে প্লাবিত হয়েছে উত্তরের চার জেলা লালমনিরহাট, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম ও রংপুর। পানিবন্দি হয়েছে পড়েছে ২৩ হাজারের বেশি পরিবার। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে তিস্তার পানি।পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় অবস্থিত তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে বোববার তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে। সকাল ৬টায় পানি বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে দুপুরের পর থেকে পানি আবার বিপৎসীমার নিচে নামতে থাকে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টার দিকে বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল।

লালমনিরহাট

এদিকে তিস্তা নদীতে উজানের ঢলে লালমনিরহাটে পাকা রাস্তায় কোথাও হাঁটু, কোথাও আবার কোমর পানি। ঘরবাড়ি তো ডুবেছেই, কোথাও কোথাও বাদ যায়নি ঘরের চালও। বাধ্য হয়ে চরাঞ্চলের মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন অন্য জায়গায়। গবাদি পশুপাখি নিয়ে বন্যার্তরা উচু স্থানে অবস্থান নিয়েছেন। অনেকেই উচু স্থানে চুলা জ্বালিয়ে রান্নার কাজ সারছেন। গতকাল থেকে পানি তোড়ে আসায় নতুন নতুন এলাকায় এখনো পানি প্রবেশ করছে। নলকুপ ও টয়লেটে পানি ওঠায় বিশুদ্ধ পানি সংকট ও স্যানিটেশন সমস্যায় পড়ছেন তারা। দেখা দিয়েছে খাবার সংকট।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ত্রাণ শাখা জানায়, তিস্তার পানি বেড়ে জেলার পাঁচটি উপজেলার চারটিতে ১৭ হাজার ৩৫০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এরমধ্যে সদর উপজেলার ৭ হাজার ৫০০ পরিবার, হাতীবান্ধায় ৫ হাজার ৬৫০, আদিতমারীতে ৩ হাজার পরিবার এবং কালীগঞ্জ উপজেলার ১ হাজার ২০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

আদিতমারীর মহিষখোঁচার জাহিদুল ইসলাম বলেন, মোর বাড়ির উঠানসহ চারদিকত তিস্তার পানি উঠি জলবন্দ হইছে। সড়কের ওপরত আছোং পরিবার নিয়া। কাজকাম নাই। খুব সমস্যা।’

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রাকিব হায়দার বলেন, সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির দিকে জেলা, উপজেলা ও পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ নজর রাখছে। এরই মধ্যে দুর্গত পরিবারগুলোর জন্য ত্রাণসহায়তা হিসেবে ১৩ লাখ টাকা ও ৯০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

নীলফামারী

অপরদিকে  তিস্তার পানি বেড়ে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার নদীতীরবর্তী ১৫টি গ্রামের পাঁচ হাজারের বেশি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

পূর্ব ছাতনাই ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ খাঁন বলেন, পূর্ব ছাতনাই ও ঝাড়সিংহেরস্বর মৌজার প্রায় ১ হাজার ২০০ পরিবারের বাড়িঘরে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। পানি বাড়তে থাকায় মানুষজন আতঙ্কের মধ্যে আছেন।

পাউবো নীলফামারীর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আতিকুর রহমান বলেন, শনিবার রাতে তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে। রোববার দুপুরের পরে পানি আবার বিপৎসীমার নিচে নেমে আসে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় তিস্তা ব্যারাজের সব কটি জলকপাট (৪৪টি) খুলে রাখা হয়েছে।

কুড়িগ্রাম

তিস্তা নদীর পানি বেড়ে কুড়িগ্রামে নদীতীরবর্তী এক হাজারের বেশি পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া তিস্তা ছাড়াও জেলার প্রধান প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি বাড়ছে। পাউবোর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও ধরলা, গঙ্গাধর, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে।

গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় ধরলা নদীর পানি তালুক শিমুলবাড়ী পয়েন্টে ৬২ সেন্টিমিটার, দুধকুমার নদ পাটেশ্বরী পয়েন্টে ৪৪ সেন্টিমিটার এবং ব্রহ্মপুত্র নদ চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ২ দশমিক ৪৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

রংপুর

রংপুরের কাউনিয়াউপজেলার চরাঞ্চলসহ নিম্নাঞ্চলও প্লাবিত হয়েছে। নদীতীরবর্তী উপজেলার ৫০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

পাউবো সূত্রে জানা যায়, শনিবার রাতে কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টার দিকে এই পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৩১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র রংপুর থেকে গতকাল জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় মাত্র ২ মিলিমিটার বৃষ্টি হলেও তিস্তার পানি বেড়েই চলেছে। এ পরিস্থিতিতে কাউনিয়া ছাড়াও পীরগাছা ও গঙ্গাচড়া উপজেলায় নদীপারের মানুষকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।পাউবো রংপুরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবিব বলেন, জেলার তিন উপজেলায় নদীপারের মানুষকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তিস্তার পানি কমে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে বলে জানান তিনি।

Place your advertisement here
Place your advertisement here