• মঙ্গলবার ২২ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • কার্তিক ৬ ১৪৩১

  • || ১৭ রবিউস সানি ১৪৪৬

Find us in facebook

মেট্রোরেল যেকোনো সময় চালু সম্ভব, দরকার সিদ্ধান্ত

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১০ আগস্ট ২০২৪  

Find us in facebook

Find us in facebook

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় রাজধানী ঢাকার জনপ্রিয় গণপরিবহন মেট্রোরেলের কোচ, লাইন ও সংকেত ব্যবস্থার কোনো ক্ষতি হয়নি। মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনের টিকিট বিক্রি ও যাত্রীদের ভাড়া আদায়সংক্রান্ত ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই দুটি স্টেশন বাদ দিয়ে বাকি ১৪টি স্টেশনের মধ্যে মেট্রোরেল যেকোনো সময় চালু করা সম্ভব।

ঢাকায় মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। সংস্থাটির সংশ্লিষ্ট সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশন ছাড়া বাকি স্টেশনে যাত্রী ওঠানামা, টিকিট বিক্রি কিংবা স্বয়ংক্রিয় ভাড়া কেটে রাখার ব্যবস্থা পুরোপুরি অক্ষত আছে। ফলে চাইলে যেকোনো সময় উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু করা সম্ভব। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, নতুন সরকারে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব কোনো উপদেষ্টাকে দেওয়া হয়নি। তারা উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্ত পেলেই মেট্রোরেল চালু করবে। আগামীকাল রোববার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস অফিস করলে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব এই বিষয়ে নির্দেশনা চাইতে পারেন।

ডিএমটিসিএল সূত্র জানায়, মেট্রোরেলর সব ব্যবস্থাই সচল আছে। তবে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকলে এর সব ব্যবস্থা ঠিক আছে কি না, তা দেখার জন্য পরীক্ষামূলক চালানোর আন্তর্জাতিক রীতি আছে। সে ক্ষেত্রে উচ্চপর্যায়ের অনুমতি পেলে পরীক্ষামূলক চলাচল শুরু হবে। তবে পরীক্ষামূলক চলাচল এক দিন না আরও বেশি করা হবে, তা নির্ভর করছে ডিএমটিসিএলের কারিগরি দলের ওপর।

গত ১৮ জুলাই মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বরে পুলিশ বক্সে অগ্নিসংযোগ করা হলে ওই দিন বিকেল ৫টায় মেট্রোরেলের চলাচল বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এর পরদিন মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনে ভাঙচুর করা হয়। ২০ জুলাই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক। মিরপুর ১০ স্টেশন ঘুরে দেখে ওই দিন গণমাধ্যমকর্মীদের ব্রিফিংয়ের সময় তিনি বলেন, ‘‌ক্ষতিগ্রস্ত স্টেশন দুটি মেরামত করে পুনরায় চালু করতে এক বছরের মতো সময় লাগতে পারে।’

২৭ জুলাই তখনকার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অবশ্য সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘মেট্রোরেলের কাজীপাড়া ও মিরপুর ১০ স্টেশন ধ্বংসপ্রাপ্ত। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এটা এক বছরেও যন্ত্রপাতি এনে সচল করা সম্ভব হবে না।’


মতিঝিল থেকে মেট্রোরেলের সর্বশেষ ট্রেন ছাড়ে রাত ৯টা ৪০ মিনিটে। আর উত্তরা উত্তর থেকে মতিঝিলের পথে সর্বশেষ ট্রেন ছাড়ে রাত ৯টায়। সারা দিনে প্রায় ২০০ বারের মতো মেট্রোরেল চলাচল করে। যাত্রী যাতায়াত করে তিন লাখের মতো।

মেট্রোরেলের ক্ষয়ক্ষতি ও কবে চালু করা হবে জানার জন্য আজ বিকেল থেকে একাধিকবার ফোন করলেও ধরেননি ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এ এন ছিদ্দিক।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘কাল রোববার বিষয়টি নিয়ে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হতে পারে। এরপরই মেট্রোরেল চালুর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হবে।’

ক্ষয়ক্ষতি কী পরিমাণ
মেট্রোরেলের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ এবং কবে নাগাদ এটি আবার চালু করা যাবে, তা নির্ধারণে ২২ জুলাই মেট্রোরেল লাইন-৬-এর অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক মো. জাকারিয়ার নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে ডিএমটিসিএল।

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনে মূলত কম্পিউটার ও স্বয়ংক্রিয় ভাড়া আদায় ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া যে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে ট্রেনের আসা-যাওয়া, সংকেত ব্যবস্থা এবং চালকের সঙ্গে যোগাযোগ হতো, সেই কক্ষের কম্পিউটার ভাঙচুর করা হয়েছে। এর বাইরে সিসিটিভি ক্যামের এবং কাচ ভাঙা হয়েছে।

মিরপুর-১০ নম্বর স্টেশনে যাত্রীদের নিজ থেকে টিকিট কাটার জন্য দুই প্রান্তে ছয়টি মেশিন (ভেন্ডিং মেশিন) ছিল। এগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আটটি কাউন্টারে ডিএমটিসিএলের কর্মীরা যে টিকিট বিক্রি করতেন, সেগুলোও ভাঙচুর করা হয়েছে। এ ছাড়া স্টেশনের দুই দিক থেকেই যাত্রীদের আসা-যাওয়ার ১৬টি স্বয়ংক্রিয় গেট ছিল। এগুলোতে প্রবেশ এবং বের হওয়ার সময় এমআরটি পাস ও সাময়িক পাস স্পর্শ করলে ভাড়া কেটে রাখা হয়। এগুলোও নষ্ট করা হয়েছে।

কাজীপাড়া স্টেশনে চারটি ভেন্ডিং মেশিন, ছয়টি টিকিট কাটার কাউন্টার এবং ছয়টি আসা-যাওয়ার স্বয়ংক্রিয় গেট ভাঙচুর করা হয়েছে।

ডিএমটিসিএল সূত্র জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত জিনিসগুলো কাস্টমাইজ করা। এগুলো সরবরাহ করেছে জাপানের নিপ্পন সিগন্যাল কোম্পানি। বাজার থেকে চাইলে কেনা যাবে না। নিপ্পন সিগন্যাল কোম্পানি থেকেই কিনতে হবে। তবে নতুন করে এর কোনো নকশা বা সফটওয়্যার সংক্রান্ত পরিবর্তন লাগবে না।

সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, আন্তর্জাতিক রীতি হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত হলে এসব যন্ত্র নতুন করে স্থাপন করতে হবে। জাপানি কোম্পানি বলেছে কেনার ফরমাশ দেওয়ার পর এগুলো সরবরাহ করতে ছয় মাস লাগতে পারে। তবে কোম্পানিকে চাপ দিয়ে তিন মাসের মধ্যেও সরবরাহ করা সম্ভব।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএমটিসিএলের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, দুই স্টেশন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর বলা হয়েছিল সাড়ে ৩০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তবে এটা পুরোপুরি রাজনৈতিক হিসাব, এ নিয়ে যাচাই-বাছাই করা হয়নি। দুটি স্টেশনের ক্ষতিগ্রস্ত যন্ত্রপাতি পুনঃস্থাপনে ৫০ কোটি টাকাও লাগার কথা নয়।

কর্মবিরতি
এদিকে চলাচল বন্ধ থাকলেও সরকার পরিবর্তনের পর মেট্রোরেলের ১০ থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মচারীরা ছয় দফা দাবিতে সর্বাত্মক কর্মবিরতি ঘোষণা করেছেন। গত বৃহস্পতিবার মেট্রোরেলের উত্তরা ডিপোর সামনে মানববন্ধন করে কর্মবিরতির ঘোষণা দেওয়া হয়।

মানববন্ধনে বলা হয়, বৈষম্যমূলক বেতনকাঠামোর ফলে প্রত্যেক কর্মচারী আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। মেট্রোর কর্মীরা প্রতিনিয়ত বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন, যা উন্নীত করে বৈষম্য দূর করা প্রয়োজন। তাই দাবি আদায় না হলে তাঁরা কর্মবিরতি পালন করবেন।

Place your advertisement here
Place your advertisement here