• রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • ভাদ্র ২৪ ১৪৩১

  • || ০৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

Find us in facebook

রংপুরে কলেজ অধ্যক্ষকে গুলি করে হত্যার হুমকি জাপা’র আহবায়কের

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৪ জুলাই ২০২৪  

Find us in facebook

Find us in facebook

২৪ ঘণ্টার মধ্যে গভর্নিং বডির সভাপতি না করলে সমাজকল্যাণ বিদ্যাবীথি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মফিজার রহমান মিজুকে গুলি করে হত্যার হুমকি দিয়েছেন রংপুর জেলা জাতীয় পার্টির (জাপা) আহ্বায়ক মো. আলাউদ্দিন মিয়া। গত ২৪ জুন কলেজের অধ্যক্ষের কক্ষে এ ঘটনা ঘটে।

গুলি করে হত্যার হুমকির সেই দৃশ্য অধ্যক্ষের কক্ষে থাকা সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়ে। গতকাল রবিবার রাতে সিসিটিভি ক্যামেরার ওই ভিডিও ফুটেজ ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। বিষয়টি নিয়ে কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

কলেজ কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আলাউদ্দিন মিয়া জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের উপদেষ্টা ছিলেন। গত ২২ মার্চ তাকে রংপুর জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর আগে জেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন। বাড়ি নগরীর বাবু খাঁ এলাকায়। কারমাইকেল কলেজ ছাত্র সংসদের দুবারের সাবেক এই ভিপি পড়াশোনা শেষে কাস্টমস কর্মকর্তা হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন। এরপর অবসরে যান। সম্প্রতি জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা করেছিল দুদক।

গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে রংপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের স্বাক্ষরিত একটি ডিও লেটার নেন আলাউদ্দিন। ওই ডিও লেটারসহ দলের সহযোগী ছাত্র সংগঠন জাতীয় ছাত্র সমাজের দুই নেতাকে সঙ্গে নিয়ে গত ২৪ জুন দুপুর ১২টার দিকে সমাজকল্যাণ বিদ্যাবীথি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মফিজার রহমান মিজুর কক্ষে যান। ৪০ মিনিট অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলেন।

অধ্যক্ষের সঙ্গে আলোচনার শুরুতে নিজেকে জাতীয় পার্টির জেলা আহ্বায়ক পরিচয় দিয়ে আলাউদ্দিন বলেন, ‘রংপুরের মানুষ আমাকে ভিপি আলাউদ্দিন নামে চেনে। দলের চেয়ারম্যানের ডিও লেটার নিয়ে এসেছি। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমাকে কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি করতে হবে। কীভাবে করতে হবে, তা আমি জানি না, জানতেও চাই না। কিন্তু আমাকেই সভাপতি করতে হবে। এই তার ডিও লেটার।’

এর জবাবে অধ্যক্ষ বলেন, ‘গভর্নিং বডির সভাপতি হওয়ার কিছু নিয়মনীতি আছে। সেগুলো মেনেই হতে হবে। আর সভাপতি করার ক্ষমতা আমি রাখি না। কারণ ম্যানেজিং কমিটিও চাইতে হবে।’ মূলত এই নিয়েই ক্ষুব্ধ হন আলাউদ্দিন। সেইসঙ্গে অধ্যক্ষকে গুলি করে হত্যার হুমকি দেন।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া সিসিটিভি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, অধ্যক্ষ মফিজার রহমান আলাউদ্দিনকে বলছেন কীভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির সভাপতি হয়, তা আমি আপনাকে বলছি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে আলাউদ্দিন বলেন, ‘আমি কোনও কথা শুনবো না। কীভাবে করতে হবে, তা জানি না, জানতেও চাই না। যেভাবেই হোক, আমাকে সভাপতি করতে হবে। আমি ডিও লেটার নিয়ে এসেছি। এটি তোমার সামনে রাখলাম। তুমি স্বাক্ষর করে আনুষ্ঠানিকতা শেষ করো। এখানে তোমার কোনও কথা শোনার জন্য আসি নাই। আমি সেদিনও তোমাকে বলেছিলাম, এখন ডিও লেটার নিয়ে আসার মানে কিছু বুঝছো? আমার পকেটের পিস্তলে সবসময় ছয়টা গুলি লোড করা থাকে। তোমার কি মনে হয় ইয়ার্কি করার জন্য আসছি এখানে? তুমি কোনও গুরুত্বই দিচ্ছো না। একমাত্র দাতা সদস্য হিসেবেও সভাপতি হতে পারি। এরপরও একটু অস্বাভাবিক প্রক্রিয়া ভেবে আমি দলের চেয়ারম্যানের ডিও নিয়ে এসেছি। তুমি সাইন করো।’

জবাবে অধ্যক্ষ বলেন, ‘কোনও সমস্যা নেই; যদি দাতা সদস্য হয়ে থাকেন; আমি এটাতে সাইন করে দেবো।’ তখন আলাউদ্দিন বলেন, ‘এরপরও বিষয়টি আমি দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডকে জানিয়েছি। সেখান থেকেও আমাকে সমর্থন দেওয়া হয়েছে। জবাবে অধ্যক্ষ বলেন, ‘সেটি আমি জানি না। আপনি ডিও নিয়ে এসেছেন আপনিই তা জানেন। সে বিষয়ে আমি কিছু জানি না, আমাকে কিছু জানানো হয়নি।’    

এমন জবাবে উত্তেজিত হয়ে দাঁড়িয়ে যান আলাউদ্দিন। সঙ্গে সঙ্গে নিজের প্যান্টের পকেট থেকে পিস্তল বের করে বলেন, ‘চুপ, ডোন্ট টক, একদম গুলি করে দেবো। কোনও কথা বলবি না। যা বলেছি, তাই কর। গুলি করে মারলে আমার লোমও বাঁকা করা যাবে না।’ এর ফাঁকে অধ্যক্ষ বলেন, ‘গুলি করে দেন, কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু সভাপতি করার ক্ষমতা আমি রাখি না।’ পিস্তল বের করতে দেখে পাশে বসে থাকা জাতীয় ছাত্র সমাজের এক নেতা আলাউদ্দিনের হাত ধরে চেয়ারে বসিয়ে দেন। আরেক নেতা শান্ত করার চেষ্টা করেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ মফিজার রহমান মিজু বলেন, ‘জি এম কাদের স্বাক্ষরিত একটি ডিও লেটার নিয়ে সেদিন আমার কাছে এসেছিলেন আলাউদ্দিন। বলেছিলেন তাকে যেভাবেই হোক, কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি করতে হবে। আমি তাকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি কীভাবে হয়, তা বোঝানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু তিনি কিছুই শুনতে রাজি হননি। সবশেষ বলেছিলাম, সভাপতি করার ক্ষমতা আমার হাতে নেই। এতে উত্তেজিত হয়ে পিস্তল তাক করে বলেছিলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সভাপতি করতে হবে। না হয় আমাকে গুলি করে হত্যা করবেন। সেদিনের পুরো ঘটনার ভিডিও সিসিটিভি ক্যামেরায় রেকর্ড হয়ে আছে। প্রায় ৪০ মিনিট তিনি আমার কক্ষে ছিলেন। অনেক হুমকি-ধমকি দিয়েছেন। আজেবাজে কথাবার্তা বলেছেন। যাওয়ার সময়ও গুলি করার হুমকি দিয়ে গেছেন।’ 

সেদিনের ঘটনা নিয়ে আমি এখনও আতঙ্কিত এবং বিস্মিত উল্লেখ করে অধ্যক্ষ আরও বলেন, ‘বিষয়টি পুলিশ, জেলা প্রশাসন এবং জাতীয় পার্টির দায়িত্বশীল নেতাদের জানিয়েছি। কিন্তু এখনও তার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’

অধ্যক্ষকে গুলি করে হত্যার হুমকি দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে মো. আলাউদ্দিন মিয়া বলেন, ‘একটা মিসটেক হয়ে গেছে। আসলে ভুল বোঝাবুঝি থেকে এটি হয়েছিল।’

অধ্যক্ষের সঙ্গে দলের জেলা আহ্বায়কের এমন আচরণের বিষয়ে জানতে চাইলে রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক এসএম ইয়াসির বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি। তবে এ নিয়ে কোনও কথা বলতে চাই না।’

এ বিষয়ে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুনতাসির বিল্লাহ বলেন, ‘অধ্যক্ষকে গুলি করে হত্যার হুমকির খবর শুনেছি। তবে এ নিয়ে এখনও কোনও লিখিত অভিযোগ দেয়নি কলেজ কর্তৃপক্ষ। এমনকি অধ্যক্ষও লিখিত অভিযোগ দেননি।’

Place your advertisement here
Place your advertisement here