• বৃহস্পতিবার ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ৪ ১৪৩১

  • || ১৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

Find us in facebook

‘হুজুগে বাঙালী’

দৈনিক রংপুর

প্রকাশিত: ২৫ নভেম্বর ২০১৮  

Find us in facebook

Find us in facebook

সমাজে প্রচলিত একটি কথা হলো ‘হুজুগে বাঙালী’।কথা বা সিদ্ধান্তের শ্রোতে গাঁ ভাসিয়ে দেয়া অর্থেই কথাটি ব্যবহৃত হয়। কখনো কি এমন হয়েছে, মানুষের সঙ্গে হুজুগে আপনি ‘হ্যাঁ’ বলেছেন এবং পরবর্তীতে ভেবেছেন কেন এটা করলাম! তাহলে আপনিও মব মেন্টালিটি বা হুজুগে মানসিকতার শিকার হয়েছেন! হুজুগে মানসিকতা হচ্ছে এমন একটি ঘটনা যেখানে মানুষের আচার-আচরণ, চিন্তা-চেতনা দ্বারা চারপাশের অল্পসংখ্যক মানুষ প্রভাবিত হয়। কখনো আবার মানুষ না চাইতেও আশপাশের মানুষ দ্বারা প্রভাবিত হতে হয়। তবে এখানে কিছু বিষয় রয়েছে। যেমন- নেতার উদ্দেশ্য যদি ভালো হয়, তাহলে ফলাফল ভালো হতে পারে। আর উদ্দেশ্য যদি খারাপ হয়, তাহলে বিশাল সংখ্যক মানুষকে নিজের পক্ষে টেনে তিনি যেকোনো খারাপ কাজ করতে পারেন। এর থেকে কীভাবে মুক্তি পাওয়া যায় সে বিষয় জানার আগে হুজুগে মানসিকতার বিশেষ কিছু দিক সম্পর্কে জানা জরুরি-

মূল্যবোধের জয়

ধরুন, বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে কোথাও বেড়াতে গিয়েছেন। তারা এমন একটি কাজ করতে চায়, যেটি আপনি পছন্দ করেন না। আপনার মতামতকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়া হলো। তখন নিজেকে খুব তুচ্ছ মনে হওয়ায় বাধ্য হয়েই হয়তো আপনি সেই কাজটি করলেন।পরবর্তীতে এই মনোভাব ব্যাপকভাবে মানসিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন করতে পারে। এজন্য নিজের মূল্যবোধকে বিকিয়ে দেয়া যাবে না।

সঠিক নাও হতে পারে

একাট্টা হয়ে অনেকেই কোনোকিছুর বিরুদ্ধে কথা বলে থাকে। এহেন মন্তব্য সবসময় সঠিক হবে তা কিন্তু নয়। রেডিটের কথাই ভাবুন না, একদল মানুষ মনে করেছিল যে তারা বোস্টন ম্যারাথন বম্বিঙের সঙ্গে জড়িতকে ধরতে পেরেছেন। পরবর্তীতে দেখা যায় কথাটি সত্য নয়। তাই, মানুষ যা বলছে, তা বিশ্বাস করার আগে নিজে একটু যাচাই করে নেবেন।

আধিক্যতে বিচার

জনতা সঠিক হতে নাও পারে, আবার একইসঙ্গে বলা যায়, একটি দাবী নিয়ে অনেক মানুষ একাট্টা হলে সেটিকে উড়িয়ে দেয়াও যায় না। দশজন মানুষ একাট্টা হলে সে স্থানের আন্দোলন জোরদার বেশি হবে, নাকি হাজার হাজার মানুষ একত্রিত হলে সেখানকার আন্দোলন জোরদার বেশি হবে? আপনাকে বলা হচ্ছে না যে ভিড় দেখলেই সেখানে মানুষের সঙ্গে মিশে যান। তবে কথা একটিই, নিজে আগে যাচাই করে নিন, তারপর একাত্বতা প্রকাশ করুন।

প্রয়োজন শতকরা  জন

অনেকে মনে করেন, একস্থানে অনেক লোক জমায়েত করতে হয়তো অনেক মানুষের প্রয়োজন হয়। ব্যাপারটি মোটেও সেরকম কিছু নয়। ইউনিভার্সিটি অব লীডস-এর একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, কোনো স্থানে জনসমাগম হলে সেখানকার মাত্র শতকরা পাঁচ জন মূল বিষয়টি সম্পর্কে অবগত থাকে। বাকিরা লোকমুখে শুনতে শুনতে জড়ো হয় এবং বাকিদের কাছ থেকে কথা অন্যান্যদের কাছে ছড়িয়ে পড়ে।

সকলের পরিচয় এক!

জনসমাগমে কে ডাক্তার, প্রকৌশলী, শিক্ষার্থী এসবকিছু দেখা হয় না। যে উদ্দেশ্যটির জন্য আন্দোলন সে পরিচয়টি তখন এক হয়ে যায়।এদের বলা হয় বিদ্রোহী, আবার বলা হয় দাবী আদায়ে সোচ্চার। আবার উল্টো কিছু যে ঘটে না, তা কিন্তু নয়। জনসমাগমে পুলিশ যখন চড়াও হয়ে বেদম প্রহার করতে শুরু করে, তখন কিন্তু তাদের মাথায় কারো পরিচয় আলাদাভাবে থাকে না। তখনো সকলের পরিচয় এক হয়ে যায়।

দলীয় চিন্তা

কেউ যদি জনগণের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে, তাহলে সেখানে নিজস্ব মতামত বলতে আর কিছু থাকে না।দল যা ভাবছে, যোগদানকারীকে সেটিই ভাবতে হবে। এই দলীয় চিন্তা মাঝে মাঝে ভয়ানক কর্মকান্ডেরও জন্ম দেয়। তখন কেউ এর বিরোধীতা করলেও দলীয় কারণে চুপ থাকতে হয়, প্রকাশ করতে পারে না সকলের সামনে।

ভাবনার ভাগিদার

এই ধরনের মনোভাব খুবই ভয়ঙ্কর। সামাজিকভাবে কেউ যদি কারো সঙ্গে মিশতে না পারে কিংবা সমাজে যদি কারো আলাদা প্রতিপত্তি না থাকে, তাহলে সে কোনো একটি দলে গিয়ে নিজেকে নিরাপদ মনে করে। সেই দলের ব্যক্তিরো যা ভাবে নিজেও সে স্রোতেই গাঁ ভাসিয়ে থাকেন অনেকেই। এই ধরনের চিন্তাধারাকে বলা হয় স্রোতের প্রতিকূলে বয়ে যাওয়া মনোভাব।

অনলাইনে হুজুগে মানসিকতা

তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে মানুষের মন পরিবর্তন করা যেন সময়ের ব্যাপার।মনে রাখা উচিত, মানুষের ভালোটা যতো না ধীরে ছড়ায়, খারাপটি তার বহুগুণে বেশি ছড়ায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কারো বিরুদ্ধে কিছু কথা, একটি ছবি বা কিছু ব্যক্তিগত মূহুর্ত মানুষের সামনে প্রকাশ করে দিলেই বিরোধীদল সঙ্গে সঙ্গে জনরোষের আক্রোশে পড়ে যায়। এ যেন সিটিজেন জার্নালিজমের একটি উদাহরণ। কে করছে, কেন করছে, কী করছে, কোন কারণে করছে, তা আর কেউ জানতে চায় না। বর্তমান যুগে রাস্তায় দাঁড়িয়ে মানুষকে যত না একাট্টা করা যায়, তারচেয়ে বেশি একাট্টা করা যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দু’লাইন লিখে!

চিন্তাভাবনার পরিসীমা কম

বেঞ্জামিন ফ্রাংকলিন একবার বলেছিলেন, সবাই যদি একই চিন্তা করে, তাহলে কেউ কোনো চিন্তা করছে না আসলে’।সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বলুন কিংবা মানুষের কথা, যৌক্তিকভাবে চিন্তা করার কোনো উপায় মব সাইকোলজি বা হুজুগে মানসিকতা রাখছে না। ধরুন আপনি কোনো বিষয়ে একধরনের জ্ঞান নিয়ে যোগাযোগমাধ্যমে প্রবেশ করেছেন। মূহুর্তেই সবকিছু হাওয়া হয়ে যেতে বাধ্য। স্ক্রল করতে করতে সামনে চলে আসছে হাজারও স্ট্যাটাস, শেয়ারকৃত ছবি কিংবা ভিডিও। কতক্ষণ নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকতে পারবেন বলুন? আপনাকে বেরিয়ে আসতেই হবে।

সমাধান-

এই ধরনের মানসিকতা যদি আপনার মাঝে থেকে থাকে, তাহলে বেশ কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করে আপনি বেরিয়ে আসতে পারেন-

১) মানুষ যা বলছে, সামাজিক মাধ্যমে যা দেখছেন, তা বিশ্বাস করবেন না। সময় নিন, ধৈর্য্য ধরুন। সময়ের সঙ্গে ঘটনার আরো আস্তরণ বের হবে। সেগুলো যাচাই করুন।

২) যে যা বললো, সবার কথা গ্রহণ করা যাবে না। আপনার চিন্তার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ চিন্তাগুলো গ্রহণ করুন। আরো মানুষের কাছ থেকে জানতে চেষ্টা করুন। কী হচ্ছে, বোঝার চেষ্টা করুন।

৩) অনেকেই বিভিন্ন বিষয়ে মতামত দেয়ার চেষ্টা করে। ঘটনা সম্পর্কে ভালোভাবে জানা আছে কি নেই, সেটি না জেনেই মানুষের আস্থাশীল হওয়ার জন্য কিংবা আলাপ চালিয়ে নেয়ার জন্য সুরে সুর মিলিয়ে থাকেন। এমন স্বভাব থেকে বেরিয়ে আসা উচিত।

৪) কেবল ছবি বা ভিডিওতে বিশ্বাস না করে অনলাইনে লেখা পড়ুন বা আর্টিকেল ঘাঁটুন। অনেক সময় এগুলো ফটোশপ করে আপনার বিশ্বাস অর্জন করার জন্য তৈরি করা হয়। সেগুলো দেখে আপনার মনে একধরনের এমপ্যাথি চলে আসাটা স্বাভাবিক। সেখান থেকে নিজেকে বিরত রাখুন।

Place your advertisement here
Place your advertisement here