• শুক্রবার ১৮ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • কার্তিক ২ ১৪৩১

  • || ১৩ রবিউস সানি ১৪৪৬

Find us in facebook

রাসেলস ভাইপার নিয়ে গুজব ও ভুল তথ্যের ছড়াছড়ি

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৫ জুন ২০২৪  

Find us in facebook

Find us in facebook

দেশের বিভিন্ন স্থানে রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপ নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। কোথাও কোথাও এই সাপ দেখা গেলেও বেশিরভাগই মিথ্যা ও গুজব। ছড়ানো হচ্ছে পুরনো ঘটনা ও ছবি। অনেকে ভিন্ন জাতের সাপকে রাসেলস ভাইপার বলে চালিয়ে দিচ্ছে। রাসেলস ভাইপারের ছোবলে একাধিক ব্যক্তির মৃত্যুর খবর ছড়ালেও অনুসন্ধানে এর সত্যতা কম জায়গায়ই পাওয়া গেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন- কুচক্রী মহল এই সাপ নিয়ে মিথ্যা ও গুজব ছড়াচ্ছে। রাসেলস ভাইপার সাপ আগে থেকেই দেশের বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে। এ নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে- ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জসহ বেশ কয়েকটি জেলা-উপজেলায় রাসেলস ভাইপারের ছোবলে একাধিক ব্যক্তির মৃত্যুর কথা বলা হলেও তাদের মধ্যে অনেকেই অন্য কারণ ও ভিন্ন জাতের সাপের ছোবলে মারা গেছেন।

ফরিদপুর: ফরিদপুরে বিষধর রাসেল ভাইপার সাপের ছোবলে হোসেন ব্যাপারি (৫০) নামে একজন কৃষকের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। নিহতের মামা সাবেক ওয়ার্ড মেম্বার হেলালুদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, হোসেন ব্যাপারিকে রাসেল ভাইপার সাপে ছোবল দেওয়ার পর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর নেয়া হয় স্থানীয় এক ওঝার বাড়িতে। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে আবারও হাসাপাতালে নেয়া হয়। এরপর তিনি মারা যান।

ভেড়ামারা (কুষ্টিয়া): কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলায় সাপের কামড়ে আরজিনা (৩৮) নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। তিনি ভেড়ামারা উপজেলার ধরমপুর ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর মানিকের বাধ বানুতলা গ্রামে ছিদ্দীক মন্ডলের স্ত্রী। গত ২৪ জুন রাতে সাপের ছোবলে মারা যান আরজিনা (৩৮)। তবে তাকে রাসেল ভাইপার নয়, গোখরা সাপে ছোবল দেয়। নিহতের আত্মীয় মনিরুল ইসলাম, মিজানুর ও মতিউর রহমান জানান, আরজিনা খাতুনকে রাসেল ভাইপার সাপে কামড় দেয়নি। তাকে গোখরা (কুলিম) সাপে কামড়েছে। এলাকার পরানখালী গ্রামের সাপুড়ে মঞ্জিল মিয়া মাটি খুঁড়ে সাপ উদ্ধার করে দেখেন সেটি গোখরা সাপ।

রাজশাহী: গত ৬ মে সাপের কামড়ে মৃত্যু হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শাকিনুর রহমান সাব্বিরের। তার গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর চারঘাট উপজেলায়। তার বন্ধু শফিকুল ইসলাম বলেন, আমি ঘটনার সময় ছিলাম না। তবে সাপটিকে মেরে হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল। বণ্যপ্রাণী সংরক্ষণ অধিদফতরের পরিদর্শক জাহাঙ্গীর বারি জানান, আমি খোঁজ নিয়ে যতটুকু জানতে পেরেছি, ঐ শিক্ষার্থীকে কোবরা নামক সাপে কামড় দিয়েছিল।

বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক ড. মোহাম্মদ ফিরোজ জামান গণমাধ্যমকে বলেন, রাসেলস ভাইপার নিয়ে বিষধর সাপ, এটা সত্য। কিন্তু এই সাপ দৌড়ে তাড়া করে না। বাসায় এসে কামড়াবে না। এরা সাধারণত কৃষি জমিতে ইঁদুর, ব্যাঙ, কীট-পতঙ্গ অন্যান্য প্রাণী খেয়ে থাকে। ফলে আতঙ্ক না ছড়িয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে জেলা-উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়ের স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতেও অ্যান্টিভেনম টিকা প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি বলেন, এই সাপের সঙ্গে অজগর ও স্যান্ডবোয়ারের মিল আছে। কিন্তু একটু খেয়াল করলেই ভিন্নতা চোখে পড়বে। রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়ার গায়ের গোল চিহ্নগুলো আলাদা। আর অজগরের গোল চিহ্নগুলো জালের মতো, একটার সঙ্গে আরেকটা লাগানো।

বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, ভুটান, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, চীন ও মিয়ানমারেও এই সাপের উপস্থিতি রয়েছে জানা গেছে। এ সাপ সাধারণত ঘাস, ঝোপ, বন, ম্যানগ্রোভ ও ফসলের খেতে বাস করে।

মন্ত্রণালয়ের সচেতনতামূলক বিবৃতি:
রাসেলস ভাইপার নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতনতা বাড়াতে সম্প্রতি বিবৃতি দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়, রাসেলস ভাইপারের উপস্থিতি উদ্বেগজনক হলেও এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে মানুষের সঙ্গে এই সাপের মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা কম। এই সাপ সাধারণত নিচু ভূমির ঘাসবন, ঝোপজঙ্গল, উন্মুক্ত বন, কৃষি এলাকায় বাস করে এবং মানুষের বসতি এড়িয়ে চলে। সাপটি মেটে রঙের হওয়ায় মাটির সঙ্গে সহজে মিশে যেতে পারে। মানুষ খেয়াল না করে খুব কাছে গেলে সাপটি বিপদ দেখে ভয়ে আক্রমণ করে। রাসেলস ভাইপার দক্ষ সাঁতারু হওয়ায় নদীর স্রোতে ও বন্যার পানিতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিস্তৃত হয়েছে। এজন্য সবাইকে সাবধানতা অবলম্বনের অনুরোধ জানানো হয়।

রাসেলস ভাইপার থেকে রক্ষার উপায়:
মুখোমুখি হলে এই সাপই সতর্ক করবে। অধিকাংশ সময় এই সাপ প্রেশার কুকারের মতো খুব জোরে ‘হিস হিস’ শব্দ করে। এভাবে সে তার নিজের অবস্থান জানান দেয়। এমন অবস্থায় নিরাপদ দূরত্ব বজার রেখে সেই স্থান ত্যাগ করলে সংঘাতের কোনো আশঙ্কা থাকে না।

চিকিৎসা ব্যবস্থা:
সাপে কামড়ানো রোগীকে অ্যান্টিভেনম দেওয়া হয়। এই অ্যান্টিভেনম বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তালিকায় এসেনশিয়াল ড্রাগ বা অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকাভুক্ত হলেও বাংলাদেশে তা উৎপাদন হয় না, ভারত থেকে আমদানি করা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, একেক সাপের প্রকৃতি একেক রকম। তাই স্থানীয় সাপ থেকে অ্যান্টিভেনম তৈরি হলে তা সবচেয়ে কার্যকর হয়।

চিকিৎসকরা যা বলছেন:
চিকিৎসকদের মতে, রাসেলস ভাইপারের কামড়ে যদি দাঁত বসে যায়, তাহলে ক্ষতস্থানের ওই জায়গাটিসহ উপর-নিচের খানিকটা জায়গা নিয়ে হালকা করে ব্যান্ডেজ দিয়ে পেঁচিয়ে দিতে হবে। নড়াচড়া করা যাবে না। রোগীকে সাহস দিতে হবে। হাঁটা-চলাচল একেবারেই বন্ধ করে দিতে হবে। যাতে রক্ত চলাচলটা একটু কম হয়। যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

Place your advertisement here
Place your advertisement here