• শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ৪ ১৪৩১

  • || ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

Find us in facebook

যে গ্রামে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিষিদ্ধ!

দৈনিক রংপুর

প্রকাশিত: ২৩ নভেম্বর ২০১৮  

Find us in facebook

Find us in facebook

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় দশ হাজার ফুট উঁচুতে গ্রামটি অবস্থিত। সেখানে বহিরাগতদের প্রবেশ অসাধ্য হলেও বেশ খ্যাতি আছে এই গ্রামের। কারন এই গ্রামকে বলা হয় মাদক সম্রাটদের রাজ্য। বলছিলাম ভারতের হিমালয় প্রদেশের গ্রাম 'মালানা'র কথা। গ্রামটি অনেকের কাছে 'মালানা নালা' নামেও পরিচিত। গ্রামটি নিয়ে এখনো অনেক রহস্যের কথা শোনা যায়। পাহাড় বেষ্টিত এ গ্রামটি রহস্যময়ী হয়ে ওঠার একমাত্র কারণ হচ্ছে, বিশ্বের প্রাচীনতম গণতান্ত্রিক গ্রাম এটি।

 

1.যে গ্রামে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিষিদ্ধ!

মালানাকে বিশ্বের প্রাচীনতম গণতান্ত্রিক কাঠামোর গ্রাম বলার নির্দিষ্ট কিছু কারণ রয়েছে। এই গ্রামের মানুষরা বিশ্বাস করে তারা গ্রীক বীর আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের বংশধর। সেই হিসেবে তাদের জীবনাচারণ থেকে শুরু করে সার্বিক কাঠামো গড়ে উঠেছিল গ্রীক কাঠামো অনুসারে।ভারতের মধ্যে গ্রামটির অবস্থান হলেও দেশটির সরকারের কোনো আইন-কানুন বা নিয়ম চলে না এখানে।সুবিশাল এই গ্রামে নেই কোনো পুলিশ, বর্ডার গার্ড কিংবা সেনাবাহিনী।এককথায়, ভারত সরকার কর্তৃক সব ধরণের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিষিদ্ধ এখানে! তারা চলে তাদের নিয়মে, আছে নিজস্ব নিরাপত্তাবাহিনী।

 

2.যে গ্রামে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিষিদ্ধ!

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় কুল্লু ভ্যালির পার্শ্ববর্তী 'পার্বতী' উপত্যকায় সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৮ হাজার ৮৫৯ ফুট উঁচুতে এই গ্রামের অবস্থান। এই গ্রামে প্রবেশ করাটা খুবই কষ্টকর।তবে প্রবেশ করতে হলে আপনাকে প্রথমে ভারতের হিমালয় প্রদেশ যেতে হবে। হিমালয় প্রদেশের মহাসড়ক যেখানে শেষ হয়েছে সেখান থেকে ৪ দিন পায়ে হেঁটে গেলে আপনি সেই গ্রামে পৌঁছাতে পারবেন। তবে যদি পথ হারিয়ে ফেলেন, সেখানে নির্দেশনা দেয়ার মতো কেউ নেই।কারণ পথটা এতটাই ভয়ঙ্কর ওখানে কোনো মানুষ বসবাস করে না প্রাকৃতিক কারণে। তবুও প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষের আগমন ঘটে রহস্যে ঘেরা এই গ্রামটিতে। জীবন বাজি রেখে দু’ধরনের মানুষ প্রবেশ করে এই গ্রামে। মাদক ব্যবসায়ী ও পর্যটকরা। তারমধ্যে বিশ্বের বড় বড় মাদক সম্রাটদের আগমই বেশি এখানে।

 

3.যে গ্রামে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিষিদ্ধ!

হিমালয়ের এই অঞ্চলে উৎপাদিত গাঁজা থেকে তৈরি করা চরস পৃথিবী বিখ্যাত। আর এ কারণে প্রতিবছর বিপুল সংখ্যক মানুষ এই গ্রামে ঘুরতে যাওয়ার চেষ্টা করে। মালানা গ্রামবাসীর মূল অর্থনৈতিক উৎসও এই মাদক ব্যবসা। মালানার প্রতিটি মানুষই কোনো না কোনো ভাবে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। বিশ্বের মাদক জগতে বেশ বিখ্যাত হয়ে উঠেছে এই গ্রামে উৎপাদিত 'হাসিস'। ১৯৯৪ এবং ১৯৯৬ সালে পরপর দু’বার বিশ্বের সবেচেয়ে ভালো এবং দামি হাসিস উৎপাদনের রেকর্ড এই গ্রামের দখলে!

 

4.যে গ্রামে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিষিদ্ধ!

গাঁজার সবচেয়ে ভালো জাত এই অঞ্চলে জন্মায় এবং গ্রামবাসী নিজস্ব পন্থায় এই গাঁজাকে প্রক্রিয়াজাত করে। বিভিন্ন দেশের মাদকসম্রাটরা মালানা থেকে হাসিস তৈরির বিশেষ প্রক্রিয়া জেনে নেয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন।নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি প্রায় ১২জন পর্যটকের মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছিল কুল্লু ভ্যালির পাদদেশে।ধারণা করা হয়েছিলো, ওই পর্যটকরা আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালানের অংশ এবং তারা মালানাবাসীকে হাসিস উৎপাদনের ব্যাপারে জোরাজুরি করার কারণেই তাদের ওই পরিণতি হয়েছিল। ওই ঘটনায় ভারত পুলিশ কর্তৃপক্ষ মালানাবাসীর বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি।

 

5.যে গ্রামে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিষিদ্ধ!

কিছু সংখ্যক পর্যটক এই গ্রামে আসেন সেখানকার সংস্কৃতি, সৌন্দর্য ও সেখানকার বাসিন্দাদের চলাফেরা, পোশাক-সাজসজ্জা দেখতে।এই কিছু সংখ্যক পর্যটকদের মধ্যে বেশির ভাগই ইসরায়েলের বাসিন্দা। শুধু জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে এই গ্রামে ঢোকা যায় না। গ্রামের প্রবেশের আগে আপনাকে যেতে হবে তাদের একটি বিশেষ ঘরে। সেখানে আপনার গতিবিধি পরীক্ষাসহ নানা প্রশ্ন করা হবে। সবচেয়ে মুখ্য বিষয় আপনি কী কারণে মালানায় প্রবেশ করতে চান তার সঠিক উত্তর দিতে পারা।যদি ঠিকঠাক উত্তর দিতে না পারেন তাহলে বিদায় নিতে হবে সেখান থেকে! আর খুব বেশি জোর করলে তারা আপনাকে হত্যাও করতে পারে।

 

6.যে গ্রামে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিষিদ্ধ!

আপনি যদি গ্রামে ঢোকার ভিসা পেয়ে থাকেন তাহলে আপনাকে বেশ কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। প্রধান নিয়ম হচ্ছে, সবকিছু দেখতে পারবেন, কিন্তু ছুঁতে পারবে না। স্পর্শ করলেই গুণতে হবে জরিমানা। এই জরিমানার পরিমাণ বাংলাদেশী টাকায় ১ থেকে ২হাজার ৭শ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। তাদের গোপনীয় কথা শুনতে পারবেন, তবে বুঝতে পারবেন না। কারণ তাদের ভাষা পৃথিবীর আর কেউ বুঝে না! সেই ভাষার নাম কানাসি। আর খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া কারো সঙ্গে খোশ গল্প করা যাবে না। কারণ তারা পর্যটকদের চাল-চলন এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে।মালানায় যেকোনো ধরণের অনিয়ম করলে ভয়ানক শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়। আর অন্যায় না করলেও তারা যেকোনো ধরনের হয়রানি করার ক্ষমতা রাখে। আপনার অভিযোগ শোনার মতোও কেউ নেই ওখানে!কারণ,পুলিশও যে সে গ্রামে নিষিদ্ধ!

Place your advertisement here
Place your advertisement here