• সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ৭ ১৪৩১

  • || ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

Find us in facebook

ছবিগুলো নাকি ‘ভূতুড়ে’, ঘরে রাখলেই ‘নিশ্চিত মৃত্যু’!

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৫ মার্চ ২০২৩  

Find us in facebook

Find us in facebook

ভয়ের সিনেমায় এমনটা মাঝেমধ্যেই দেখা যায়। এর পেছনে লুকিয়ে থাকে কোনো না কোনো অভিশাপের কাহিনি। কোনো ছবি আবার নিজেই ‘ভৌতিক’। তবে সিনেমায় কী না হয়! বাস্তবে তেমন কিছু ঘটে না বলেই মনে হয়। কিন্তু এমন কিছু ছবির কথা ছড়িয়ে রয়েছে, যারা হয় ভূতুড়ে, নয় অভিশপ্ত। তাদের নিয়ে পল্লবিত রয়েছে নানান কাহিনি।

নরওয়ের প্রখ্যাত শিল্পী এডওয়ার্ড মুঙ্খ (১৮৬৩-১৯৪৪)-এর আঁকা ‘ডেথ অ্যান্ড দ্য চাইল্ড’-এর একটি কপি। ছবিটি ‘দ্য ডেড মাদার’ নামেও পরিচিত। মৃতা মায়ের সামনে ভীত-সন্ত্রস্ত শিশুকন্যার প্রতিকৃতিকে ঘিরে এমন রটনা রয়েছে যে, মেয়েটির চোখ নাকি ছবির দর্শককে অনুসরণ করে। ছবিটির কাছাকাছি গেলে নাকি এক রকম অদ্ভুত শব্দও শুনতে পাওয়া যায়। ছবিটি এক সময়ে যারা কিনেছিলেন, তারা জানিয়েছিলেন যে, শিশুটি নাকি মাঝেমাঝেই ছবি থেকে উধাও হয়ে যায়। মুঙ্খের মা ও বোন যক্ষায় মারা যান। সেই বেদনাবোধ থকেই এই ছবি এঁকেছিলেন মুঙ্খ।

আর্মেনিয়ান-আমেরিকান চিত্রকর আর্শিল গোর্কি (১৯০৪-১৯৪৪)-র ১৯৩৮ পর্যন্ত যাবতীয় কাজই অভিশপ্ত বলে রটনা রয়েছে। জানা যায়, এই সব ছবি টাঙাতে গেলেই বার বার দেওয়াল থেকে পড়ে যায়, কোনোটিতে আবার আগুন লেগে যায়। ১৯৬২ সালের ১ মার্চ গোর্কির ১৫টি বিমূর্ত ছবি সহ একটি বিমান উড়ানের দুইমিনিটের মধ্যে ভেঙে পড়ে। বিমানের সাতাশি জন যাত্রী ও ৮ কর্মীর সকলেই এই দুর্ঘটনায় মারা যান। অ্যান্টনি হোলস্ল্যাগ নামের এক চিত্র-গবেষকের মতে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন অটোমান সাম্রাজ্যে বসবাসরত আর্মেনীয় জনগোষ্ঠীর অসংখ্য মানুষকে সিরিয়ার মরুভূমিতে নিয়ে গিয়ে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হয়। এই গণহত্যা নাকি গোর্কিকে তাড়া করে বেড়াত। সেই কারণেই তার আঁকা ছবিগুলি আজও প্রতিশোধস্পৃহা বহন করে চলেছে।

‘অভিশপ্ত’ হিসাবে কুখ্যাত ছবিগুলোর মধ্যে সব থেকে বেশি রটনা রয়েছে ইতালীয় চিত্রকর জভান্নি ব্রাগোলিন (১৯১১-১৯৮১)-এর আঁকা ‘দ্য ক্রাইং বয়’ সিরিজ়টিকে ঘিরে। ক্রন্দনরত বালকের প্রতিকৃতির অগণিত প্রিন্ট সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে রয়েছে। ১৯৮০-র দশকে এই প্রিন্টগুলো অনেকেই কিনেছিলেন। ক্রেতাদের বেশির ভাগের বাড়িতেই নাকি তারপর আগুন লাগে। বাড়িগুলি অগ্নিদগ্ধ হলেও ছবিগুলো নাকি অবিকৃত থেকে যায়। এই ছবিকে নিয়ে গুজব এমন জায়গায় পৌঁছায় যে, ছবির প্রচুর প্রিন্ট একত্র করে সেগুলো পুড়িয়ে ফেলা হতে শুরু করে। ইংল্যান্ডের বিল্ডিং রিসার্চ এস্ট্যাবলিশমেন্ট নামে এক সংস্থা পরে জানায় যে, এই ছবি আঁকার সময় এমন এক রকমের বার্নিশ ব্যবহৃত হয়েছিল, যা সহজে আগুনকে আকৃষ্ট করতে পারে। সেখান থেকেই এই অগ্নিকাণ্ডগুলো ঘটেছিল বলে ধারণা।

আমেরিকান চিত্রকর বিল স্টোনহ্যাম ১৯৭২ সালে আঁকেন ‘দ্য হ্যান্ডস রেজ়িস্ট হিম’ ছবিটি। এক বালক এবং তার পাশে দাঁড়ানো এক মেয়েপুতুল। তারা দাঁড়িয়ে রয়েছে কাচের একটা দরজার সামনে। কাচের ও পাশে অসংখ্য হাত। এমনিতেই ছবিটা গা-ছমছমে। স্টোনহ্যাম জানিয়েছিলেন, ছবির বালকটি তারই ৫ বছর বয়সের প্রতিকৃতি। আর দরজাটি জাগ্রত বাস্তবতা এবং কল্পিত ও অসম্ভবের জগতের মাঝখানে দাঁড়িয়ে রয়েছে। পুতুলটি যেন বালকটিকে এই দুই বাস্তবতার মাঝখানে দাঁড়িয়ে সঙ্গ দিচ্ছে, তাকে হয়তো দিশা বাতলে দিচ্ছে। এই ছবিটিকে ঘিরে ভৌতিকতার কাহিনি পল্লবিত হয়ে শুরু করে। বলা হতে থাকে, ছবির বালক এবং পুতুল নাকি নড়াচড়া করে, কখনো কখনো ক্যানভাস ছেড়ে তারা বেরিয়েও যায়।

১৯৯০-এর দশকে আমেরিকান সিরিয়াল কিলার জন ওয়েন গেসি তেত্রিশ জন তরুণকে ধর্ষণ, নিপীড়ন এবং হত্যা করেন। তিনি নিজেকে ‘পোগো দ্য ক্লাউন’ বলে পরিচয় দিতেন। একটি ক্লাউন কাবে তিনি ক্লাউন হিসেবে মনোরঞ্জনের জীবিকাও কিছু দিন অর্জন করেছিলেন। ক্লাউনের চেহারায় নিজেকে আঁকেন গেসি। ছবিতে সইও করেন। পরে তার মৃত্যুদণ্ড হয়। ২০০১ সালে ছবিটি কেনেন সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব নিক্কি স্টোন। কিন্তু ছবিটি কেনার অব্যবহিত পরেই তার প্রিয় কুকুরটি মারা যায় এবং তার মায়ের ক্যান্সার ধরা পড়ে। তিনি এক বন্ধুকে ছবিটি রাখতে দেন। সেই বন্ধুর এক ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান। এর পরে আর এক বন্ধু ছবিটি নিয়ে যান। তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। ছবিটিকে আর কখনো টাঙানো হয়নি। এর অভিশপ্ত চরিত্রের গল্প ক্রমেই পল্লবিত হতে থাকে।

ইউক্রেনের চিত্রকর স্বেতলানা টেলেটস ১৯৯৬ সালে আঁকেন ‘দ্য রেন উওম্যান’ নামের এই ছবিটি। স্বেতলানা জানিয়েছিলেন, ছবিটি আঁকার আগে যখনই তিনি ফাঁকা ক্যানভাসের সামনে বসতেন, তখনই মনে হত কেউ তাকে দেখছে, তাকে নিয়ন্ত্রণ করছে। এক রকম আবিষ্ট অবস্থাতেই তিনি এই ছবিটি আঁকেন। বিক্রি হওয়ার পর বেশ কয়েক বার হাতবদল ঘটে ছবিটির। যারাই এটি কিনেছিলেন, তাদের প্রত্যেকের সঙ্গেই কিছু না কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে থাকে। সের্গেই স্কাশকভ নামের এক সঙ্গীতশিল্পী ছবিটি কেনার পর রীতিমতো আতঙ্কে ভুগতে শুরু করেন। এক ধর্মযাজক জানান, ছবিটির মধ্যে কোনো শয়তানি অস্তিত্ব ঢুকে রয়েছে। আজও ছবিটি বহু মানুষের আলোচনার বিষয়।

২০১০ সালে এক অজ্ঞাতপরিচয় শিল্পীর আঁকা ‘দি অ্যাঙ্গুইশড ম্যান’ নামের একটি ছবি সমাজমাধ্যমে ঘোরাফেরা করতে শুরু করে। ছবিটির মালিক সন রবিনসন নামে এক ব্রিটিশ নাগরিক। তার দাবি, ছবিটি আঁকার সময় শিল্পী নাকি নিজের রক্ত ব্যবহার করেছিলেন এবং আঁকা শেষ হলে তিনি আত্মহত্যা করেন। ইউটিউবে ছবিটি নিয়ে একটি ভিডিয়ো প্রকাশ করেন, যেখানে তিনি দাবি করেন যে, ছবিটি তার বাড়িতে আসার পর থেকে তিনি মাঝেমাঝেই কান্না ও গোঙানির শব্দ শুনতে পান।

উপরে বর্ণিত কাহিনিগুলোর সত্যতা কতখানি, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অনেকেই। বেশ কিছু মানুষের মতে, এগুলো নেহাতই জনশ্রুতি বা গণমনোরঞ্জনের উদ্দেশ্যে বাজারে ছড়িয়ে দেওয়া গল্প। সম্ভবত এই সব ছবির কোনোটির পিছনে রয়েছে রহস্যময় ইতিহাস, কোনোটি নিজেই গা-ছমছমে অনুভূতির জন্ম দেয়। কোনোটি আবার সমাজমাধ্যমে ঘোরাফেরা করতে করতে তার ‘ভৌতিক’ বা ‘অভিশপ্ত’ চরিত্রটি অর্জন করে ফেলেছে। তবে নেহাত গালগল্প বলে নাকচ করে দেওয়ার আগে কিন্তু এদের কাহিনি শুনতে মন্দ লাগে না। 

উপরে বর্ণিত কাহিনিগুলোর সত্যতা কতখানি, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অনেকেই। বেশ কিছু মানুষের মতে, এগুলো নেহাতই জনশ্রুতি বা গণমনোরঞ্জনের উদ্দেশ্যে বাজারে ছড়িয়ে দেওয়া গল্প। সম্ভবত এই সব ছবির কোনোটির পেছনে রয়েছে রহস্যময় ইতিহাস, কোনোটি নিজেই গা-ছমছমে অনুভূতির জন্ম দেয়। কোনোটি আবার সমাজমাধ্যমে ঘোরাফেরা করতে করতে তার ‘ভৌতিক’ বা ‘অভিশপ্ত’ চরিত্রটি অর্জন করে ফেলেছে। তবে নেহাত গালগল্প বলে নাকচ করে দেওয়ার আগে কিন্তু এদের কাহিনি শুনতে মন্দ লাগে না।

Place your advertisement here
Place your advertisement here