• শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ৬ ১৪৩১

  • || ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

Find us in facebook

ফিরে দেখা-১৯৭২: বঙ্গবন্ধু সরকারের এক হাজার কোটি টাকার কর্মসূচি   

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৬ মে ২০২০  

Find us in facebook

Find us in facebook

দেশে অর্থনৈতিক কর্মতৎপরতা স্বাভাবিকীকরণ ও সার্বিক উৎপাদন বাড়িয়ে তোলার উদ্দেশ্যে সরকার একটি স্বল্পমেয়াদি পুনর্গঠন ও উন্নয়ন কর্মসূচি তৈরি করেছে। ১৯৭২ সালে সদ্য জন্ম নেওয়া দেশের প্রথম অর্থবছরে, অর্থাৎ ১৯৭২-৭৩ সালের বাজেটের সঙ্গে দুই বছর মেয়াদে এক হাজার কোটি টাকার জরুরি কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। আগামী উন্নয়ন বাজেটের পরিমাণ ৩০০ থেকে ৩৫০ কোটি টাকা হতে পারে, এই অর্থ হবে এক হাজার কোটি টাকার পুনর্বাসন কর্মসূচির অতিরিক্ত। স্বল্প মেয়াদি পুনর্গঠন কর্মসূচি দেশের প্রথম পাঁচশালা পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে শুরু থেকেই আন্দাজ করা যাচ্ছিল। বাজেট ও পুনর্বাসন কর্মসূচি ঘোষণার পরেই পাঁচশালা পরিকল্পনা তৈরি করার ইঙ্গিত ছিল।

প্রাথমিক হিসাবে বলা হয়েছে, এই চাহিদা হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, জাতিসংঘের সংস্থাগুলো ১৯৭২ সালের এপ্রিল থেকে ১৯৭৬ সালের মে পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশের প্রয়োজনের জন্য ৯৫ কোটি মার্কিন ডলারের একটি কর্মসূচি তৈরি করে। এরমধ্যে ৩০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের খাদ্যশস্য বিদেশ থেকে আমদানি করা হবে। তবে জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর এই হিসাবের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থার হিসাব, বিশেষ করে বাংলাদেশের পুনর্বাসন, যোগাযোগ ও খাদ্যের প্রয়োজন সংক্রান্ত যে হিসাব ধরা হয়েছে, তা নিতান্তই অপ্রতুল। ১৯৭২ সালের ১৬ মে বাসস পরিবেশিত খবরে উল্লেখ করা হয় যে, স্বল্পমেয়াদি পুনর্বাসন কর্মসূচির মূল লক্ষ্য হবে— আগামী দুই বছরের মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা যাতে পাকিস্তানি সামরিক অভিযানের আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়া যেতে পারে, সেজন্য শিল্প ও অন্যান্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে সবিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা। ওয়াকিবহাল মহল মনে করে যে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হলে এবং সময়মতো সব কিছু পাওয়া গেলে এ লক্ষ্যে অবশ্যই পৌঁছানো যাবে।


বাংলাদেশ-ভারত ২৪ কোটি টাকার ঋণ চুক্তি

ঢাকায় এদিন বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ২৪ কোটি ১০ লাখ টাকার তিনটি পৃথক ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। ভারতের পক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার সুবিমল দত্ত এবং বাংলাদেশের পক্ষে বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের সচিব কে এ রব্বানী চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশের রেল সংস্থার পুনর্বিন্যাস, টেলিকমিউনিকেশন্স ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের যন্ত্রপাতির জন্য বাংলাদেশকে ১০ কোটি টাকা ঋণ দেবে ভারত, যা অতিরিক্ত সময়ে পরিশোধ করা যাবে। এছাড়া, দুটি জাহাজ ও এগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ৬ কোটি টাকা ঋণ দেবে। তৃতীয় ঋণ চুক্তি অনুযায়ী ভারত 8 কোটি টাকার অপরিশোধিত তেল সরবরাহ করবে।


যুদ্ধাপরাধীদের রাখার জন্য ‘নিরাপত্তা এলাকা গঠন’

বাংলাদেশে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্দেশ্যে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্ডিন্যান্স প্রণয়নের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছিল। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, তিন থেকে পাঁচ জন বিচারক নিয়ে ট্রাইব্যুনাল গঠিত হতে পারে। এদিকে বিচার চলাকালে যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িতদের রাখার জন্য ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে একটি পৃথক নিরাপত্তা এলাকা গঠনের কাজ চলছিল। একাত্তরের মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৯ মাস বাংলাদেশে হানাদার খান সেনারা নারকীয় উল্লাসে যে হত্যা-গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, নারী ধর্ষণ ও লুণ্ঠন করেছে, তার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচার করা হবে। যে তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে— তার সংখ্যা প্রায় এক হাজার ২শ’। এর মধ্যে জেনারেল থেকে জওয়ান রয়েছে।

যুদ্ধাপরাধের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত কাজ একটি বিশেষ তদন্তকারী দল চালাচ্ছিল। পুলিশের ডিআইজি  নুরুল ইসলাম এ দলের অধিকর্তা। যুদ্ধের ব্যাপারে চূড়ান্ত তদন্ত কাজ ততদিনে সম্পন্ন হয়েছিল।

টিক্কা, নিয়াজী ও ফরমান আলীর যে অনুচরেরা মধ্যযুগীয় বর্বরতা ও নৃশংস তাণ্ডবলীলা চালিয়ে ৩০ লাখ লোককে হত্যা করেছে, তাদের বিচারের জন্য উন্মুখ আগ্রহে অপেক্ষা করছে বাংলাদেশের জনগণ ও বিশ্ববাসী। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু সম্প্রতি আবারও ঘোষণা করেন— ‘যুদ্ধাপরাধের বিচার ঢাকার মাটিতে অনুষ্ঠিত হবে। এতে সংশয়ের কোনও প্রশ্নই ওঠে না।’

Place your advertisement here
Place your advertisement here