• মঙ্গলবার ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ১ ১৪৩১

  • || ১২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

Find us in facebook

বাকৃবি কৃষি জাদুঘরে বিরল সংগ্রহশালা

দৈনিক রংপুর

প্রকাশিত: ২২ নভেম্বর ২০১৮  

Find us in facebook

Find us in facebook

কৃষিই মানব সভ্যতার সূচনা ও বিবর্তনের ধারায় ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সময়ের সাথে সাথে কৃষি উপকরণ ও প্রযুক্তির আধুনিকায়নের ফলে পাল্টে গেছে কৃষির ঐতিহ্য ও কৃষ্টি-কালচার। এ জন্য কৃষি সভ্যতার সূচনা, বিবর্তনের ইতিহাস এবং কালের ধারায় বিভিন্ন কৃষি উপকরণ ও প্রযুক্তি নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা এখন সময়ের দাবি।এ চিন্তাধারায় দেশীয় ঐতিহ্য ও উপকরণ সংরক্ষণে দেশে সর্বপ্রথম উদ্যোগ গ্রহণ করে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি)।

২০০২ সালে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কৃষি জাদুঘরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়। ২০০৭ সালের ৩০ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মোশাররফ হোসাইন মিঞাঁ আবহমান ঐতিহ্যের এ জাদুঘরটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন শেষে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেন।

জাদুঘরটি বাকৃবি প্রশাসনিক ভবন থেকে ৫০০ মিটার পশ্চিমে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) সামনে অবস্থিত।কৃষি সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য (খনার বচন), কৃষি উপকরণ এবং পুরনো যন্ত্রপাতি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছিলেন বাকৃবির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ হোসেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক মু. মুস্তাফিজুর রহমান দেশের প্রথম কৃষি জাদুঘরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

 

1.বাকৃবি কৃষি জাদুঘরে বিরল সংগ্রহশালা

এর প্রবেশ কক্ষেই দর্শকদের স্বাগত জানাবে অ্যাকুইরিয়ামের বেশ কয়েক প্রকার বাহারী মাছ। এ কক্ষেই স্থান পেয়েছে কৃষির উন্নয়নে অবদান রেখেছেন এমন চার নেতার ছবি। এঁরা হলেন- ১৯২২ সালে ‘লাঙল যার জমি তার’ স্লোগান তোলা ফারাক্কা মিছিলের নেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, ১৯৩৮ সালের ১১ ডিসেম্বর পূর্ব বাংলার কৃষিশিক্ষা উন্নয়নে ঢাকায় কৃষি ইনস্টিটিউটের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনকারী অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, ১৯৭৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি কৃষিবিদদের প্রথম শ্রেণির মর্যাদা দানকারী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ১৮০০ খাল খনন করে কৃষিতে অবদান রাখা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। এই কক্ষেই বাকৃবির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত সব উপাচার্যের ছবিও স্থান পেয়েছে। ৬টি প্রদর্শনী কক্ষে বড় বড় কাঁচের কাঠামোতে সাজানো রয়েছে ৪৪৯টি উপকরণ। উপকারণগুলো সহজে চেনার জন্য স্থানীয় নাম ব্যবহার করা হয়েছে। উপকরণভেদে বৈজ্ঞানিক নাম, সংগ্রহের উৎস ও তারিখ এবং কী কী কাজে ব্যবহার হয়- সেসব উল্লেখ রয়েছে। প্রতিটি কক্ষের ভেতর এবং বাইরের দিকে দেওয়ালে কৃষিভিত্তিক নানা ধরণের খনার বচন সাঁটানো রয়েছে। যা আবহমান কাল থেকেই কৃষির সাথে সম্পৃক্ত মানুষের জীবন ও জীবিকার বাস্তব প্রতিকৃতি ও সম্পর্ক তুলে ধরেছে।

প্রথম এবং দ্বিতীয় প্রদর্শনী কক্ষে নানা জানা-অজানা উপকরণ। এখানে রয়েছে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রাপ্ত ভিন্ন ভিন্ন রং ও গন্ধের মাটি, বেশ কয়েক জাতের দেশীয় মাছ, বিভিন্ন অঞ্চলে চাষ হওয়া নানান জাতের ধান, পাট, ডাল, ছোলা, সরিষা, টমেটো, বাদামসহ বিভিন্ন ধরণের শস্য ও বীজ, পাহাড়ি চাষাবাদের মডেল, বিভিন্ন রোগের চিত্রসহ বর্ণনা, বিভিন্ন মসলার উপকরণ, তেল বীজ, ঔষুধি ফল ও পাতা। এ ছাড়াও রয়েছে বিড়াল, বানর, খরগোশ, মুরগি, কুকুর, অজাগর সাপ, ঘোড়ার মাথা ক্যাঙ্গারুসহ বিভিন্ন প্রাণীর কঙ্কাল, গরু, মহিষ ও হরিণের শিং এবং বিরাট আকারের এক শকুন।

তৃতীয় প্রদর্শনী কক্ষটিকে বাংলার গৃহস্থ ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক বলা যেতে পারে। কারণ এতে স্থান পেয়েছে গ্রাম-বাংলায় গৃহস্থলীর কাজে ব্যবহৃত উপকরণ। এখানে রয়েছে ঢেঁকি, কুলা, মুরগির খাঁচা, দাবা, হুকা, পানের ডাবর , গরুর গাড়ির মডেল, জিপসি, হরেক রকমের হারিকেন ও কুপি, গাছা, বেহালা, তবলাসহ নানান দেশীয় বাদ্যযন্ত্র।

চতুর্থ প্রদর্শনী কক্ষে স্থান পেয়েছে জমি চাষাবাদের বেশ কিছু যন্ত্রপাতি ও অনেক আগের ব্যবহৃত ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি। যেমন দা, কোদাল, শাবল, মাইক্রোকম্পিউটার, তীর, ধনুক, ইপিস্কোপ, প্রিন্টারসহ নানান রকমের জিনিস। পঞ্চম প্রদর্শনী কক্ষটিতে রয়েছে কৃষকের পূর্ণাঙ্গ বসত বাড়ির মডেল, লাঙ্গল, হাল চাষের বিভিন্ন মডেল ইত্যাদি।

 

2.বাকৃবি কৃষি জাদুঘরে বিরল সংগ্রহশালা

ষষ্ঠ এবং শেষ প্রদর্শনী কক্ষে রয়েছে জমি চাষাবাদের জন্য পাওয়ার টিলার, ধান মাড়াইয়ের আধুনিক যন্ত্রপাতি ও বাংলা গ্রামীণ নারীদের হাতে তৈরি নকশীকাঁথা, গারো সম্প্রদায়ের তৈরি পোশাক অর্ণা, ঘাণি ইত্যাদি।

কৃষিসংশ্লিষ্ট এত বিশাল সংগ্রহশালা বাংলাদেশের আর কোথাও নেই। জাদুঘরটি পরিদশর্নের মাধ্যমে শহরের ইট, পাথর কিংবা কাঁচঘেরা মানুষ খুব সহজেই গ্রামবাংলার হারিয়ে যাওয়া প্রকৃতি উপভোগ করতে পারবেন। জাদুঘরটি শুক্র ও শনিবার ছাড়া সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে।

Place your advertisement here
Place your advertisement here