• বৃহস্পতিবার ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ৪ ১৪৩১

  • || ১৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

Find us in facebook

পাঠক সংকটে জবির লাইব্রেরি

দৈনিক রংপুর

প্রকাশিত: ১৪ নভেম্বর ২০১৮  

Find us in facebook

Find us in facebook

শিক্ষার্থীদের আগ্রহ হারাচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি। অব্যবস্থাপনা, বাধ্যবাধকতা আর নিত্যনতুন নিয়মকানুন এর জন্য দায়ী বলছেন শিক্ষার্থীরা। ফলে পাঠক শূণ্য হচ্ছে লাইব্রেরিটি।

সম্প্রতি দেখা যায়, ২৮০ জন পাঠক ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন লাইব্রেরিতে দেখা মেলেনি অর্ধডজন পাঠক।

শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তারা এই প্রতিবেদকের কাছে তুলে ধরেন নানামুখী সংকটের কথা।

নতুন ভবনের ৬ষ্ঠ তলায় একটি অংশে অবস্থিত লাইব্রেরিটি সপ্তাহে ৫ দিন ররিবার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮ থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকে। বিকেল ৪টায় ক্যাম্পাস ছুটির সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ হয়ে যায় শিক্ষার্থীদের ব্যবহারের একমাত্র লিফট। ফলে ৬ তলায় সিঁড়ি বেয়ে ওঠা হয়ে পড়ে দূরুহ। লাইব্রেরিতে পাঠক সংকটের কারণ হিসেবে জানা যায়, সেখানে সিলেবাস অনুযায়ী বই পাওয়া যায় না। কিছু পাওয়া গেলেও নেই সর্বশেষ সংস্করণ। ছেঁড়া ও পুরাতন হওয়ায় অনেক বই-ই পড়ার অযোগ্য। কোনও বইয়ের বিশেষ অংশ প্রয়োজন হলেও নেই ফটোকপি করার ব্যবস্থা।

লাইব্রেরিতে বই সংগ্রহের জন্য প্রবেশমুখেই রয়েছে ক্যাটালগ ব্যবস্থা। পুরাতন এ ব্যবস্থায় প্রতিটি ক্যাটালগে আছে ১০০ এর কাছাকাছি টোকেন, যেখান থেকে বই খুঁজে পাওয়া কষ্টকর। টোকেন থাকলেও অধিকাংশ সময় পাওয়া যায় না সংশ্লিষ্ট বই। আবার সব টোকেন নেই। টোকেনগুলোও অগোছালো পড়ে আছে। লাইব্রেরি কার্ডে নেওয়া যায় একটিমাত্র বই। লাইব্রেরি কার্ড করার সুযোগ সপ্তাহের মঙ্গলবার ১০-১১টা। ফলে সিংহভাগ শিক্ষার্থীর নেই লাইব্রেরি কার্ড।

আলো-বাতাস প্রবেশের জন্য নেই পর্যাপ্ত জানালা। কর্মকর্তাদের রুমে এসি থাকলেও রিডিং রুমে শিক্ষার্থীদের ভরসা বৈদ্যুতিক পাখা।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, লাইব্রেরিতে নেই খাবার পানির ব্যবস্থা, মেয়েদের নামাজের জায়গা। শিক্ষার্থীরা সাধারণত কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের টয়লেট ব্যবহার করলেও ক্যাম্পাস ছুটির পর সেটা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সামান্য বিষয়েও তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন লাইব্রেরিতে কর্মরত কর্মচারীরা।

ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়কে যেখানে মুক্তবুদ্ধিচর্চার তীর্থ কেন্দ্র বলা হয়, সেখানে জবির লাইব্রেরিতে নেই অ্যাকাডেমিক বইয়ের বাইরে সাহিত্য-শিল্পচর্চার সুযোগ। বিশ্বসেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে জ্ঞানচর্চা ও গবেষণারক্ষেত্র বৃদ্ধির লক্ষ্যে লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করা হলেও বেহাল দশা জবির কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির।’

লাইব্রেরিতে পড়তে আসা গণিত বিভাগের ১১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আফ্রিদা হৃদ বলেন, ‘লাইব্রেরিতে বর্তমানে বই নিতে দেওয়া হয় না। আবার লাইব্রেরিতে প্রয়োজনীয় বইটিও খুঁজে পাওয়া যায় না।’

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী সাদিয়া আফসানা বলেন, ‘প্রথম কয়েকদিন এসেছিলাম পড়তে কিন্তু বাইরের বই আনতে না দেওয়া, কার্ড ছাড়া প্রবেশ করতে না দেওয়াসহ নানা নিয়মকানুনের বেড়াজালে আগ্রহ হারিয়েছি।’

পাঠক সংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে লাইব্রেরিয়ান এনামুল হক বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের উপযোগী করতে আমরা লাইব্রেরির উন্নয়ন অব্যাহত রেখেছি। বারবার বই ক্রয়ের চেষ্টা করা হলেও টেন্ডার ড্রপ হয়। ফলে ডিপার্টমেন্টগুলোকে টাকা দেয়া হয় কিন্তু তারা বেশিরভাগ বই সেমিনারের জন্য রেখে দেয়। বই সহজে পাওয়ার জন্য আমরা ক্যাটালগ বাদ দিয়ে সফটওয়্যার সিস্টেমে যাওয়ার চেষ্টা করছি।’

লাইব্রেরির সার্বিক বিষয় জানতে চাইলে জবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, ‘বর্তমান লাইব্রেরিটি বিশ্ববিদ্যালয় উপযোগী নয়। আমরা বর্তমান লাইব্রেরিটিকে ই-লাইব্রেরিতে পরিণত করবো। এ লক্ষ্যে ৪০টি কম্পিউটার অর্ডার করা হয়েছে। বিশ্বমানের লাইব্রেরি করতে আলাদা ভবন, পরিকল্পিত রিডিং রুম, রেফারেন্স রুম, পর্যাপ্ত বইয়ের দরকার। কিন্তু এখানে পরিসর বাড়ানোর সুযোগ নেই। নতুন ক্যাম্পাসে লাইব্রেরির জন্য আলাদা ভবন করা হবে। সেই সঙ্গে ৪-৫ হাজার শিক্ষার্থী একসঙ্গে পড়তে পারে সে ব্যবস্থা করা হবে।

Place your advertisement here
Place your advertisement here