• সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ৮ ১৪৩১

  • || ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

Find us in facebook

বাংলাদেশে বিনিয়োগে এক নম্বরে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র    

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৬ মার্চ ২০২৩  

Find us in facebook

Find us in facebook

 
বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র এক নম্বরে রয়েছে এবং তার দেশ ভবিষ্যতেও এই স্থান ধরে রাখবে বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। 

বুধবার (১৫ মার্চ) নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে ইউনিক মেঘনাঘাট পাওয়ার লিমিটেডের (ইউএমপিএল) ৫৮৪ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন গ্যাসভিত্তিক কম্বাইন্ড সাইকেলের বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে এ কথা জানান তিনি।

এ সময় তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগে নম্বর ওয়ান। আগামীতেও আমাদের বিনিয়োগের এই ধারা অব্যাহত থাকবে। আমরা এ দেশে বিদেশি বিনিয়োগে এক নম্বরই থাকবো।’ পরিদর্শনের সময় রাষ্ট্রদূতকে প্রকল্পটির সর্বশেষ অবস্থা পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে জানানো হয়। 

এতে বলা হয়, ইউএমপিএলের মেঘনাঘাট বিদ্যুৎকেন্দ্রটি সব আইন মেনে নির্মাণ কাজ পরিচালনা করছে। প্রকল্পটি সামাজিক ও পরিবেশগতভাবে আন্তর্জাতিক উচ্চ মান বজায় রাখছে। প্রকল্প কোম্পানি পুনর্বাসন কর্ম-পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে এবং প্রকল্পের ক্ষতিগ্রস্তদের যথাযথ পুনর্বাসন এবং উন্নত জীবিকা নিশ্চিত করার জন্য জীবিকা পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। প্রকল্প সংস্থাটি বেশ কয়েকটি সিএসআর (করপোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটি) কার্যক্রম পরিচালনা করছে, যার মধ্যে রয়েছে সুবিধাবঞ্চিতদের মাসিক ভাতা, নদী ঘাট নির্মাণ এবং ঘাটের অ্যাপ্রোচ রাস্তা, দরিদ্রদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ, দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ, গ্রামবাসীদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সহায়তা করা।

চৌধুরী নাফিজ সরাফাত বলেন, ইউএমপিএল, জিই এবং নেব্রাসসহ আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের সহযোগিতায় এসইআরভি, এআইআইবি, ডিইজি ও ওপেক তহবিল থেকে প্রকল্পে বিনিয়োগ এসেছে। এই বিনিয়োগ এখানে বিশ্বমানের অবকাঠামো নির্মাণে সাহায্য করেছে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র বাংলাদেশের জনগণকে পরিবেশসম্মত, নির্ভরযোগ্য এবং সাশ্রয়ী মূল্যের বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে। এটি একটি পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ প্রকল্প। কেন্দ্রটি অন্যান্য বিদ্যমান কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্টের তুলনায় কম গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গত করবে।

ইউএমপিএলের চেয়ারম্যান মো. নূর আলী বলেন, এই প্রকল্পটি বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের সক্ষমতার প্রতীক। এটি একটি সর্বোচ্চ দক্ষ উচ্চ প্রযুক্তির বিদ্যুৎকেন্দ্র। কেন্দ্রটির কমদামের বিদ্যুৎ উৎপাদনের কারণেই বিপিডিবির কাছে মেরিট অর্ডারে শীর্ষস্থান দখল করবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দেশ বিদ্যুৎ খাতের মাস্টার প্ল্যান ও ভিশন ২০৪১-এর লক্ষ্য অর্জনের এক ধাপ এগিয়ে যাবে।

জিই গ্যাস পাওয়ার দক্ষিণ এশিয়ার সিইও দীপেশ নন্দা বলেন, জিই গ্যাস পাওয়ার বাংলাদেশে সাশ্রয়ী, নির্ভরযোগ্য এবং টেকসই বিদ্যুৎ উৎপাদনে নতুন ও আধুনিক প্রযুক্তি আনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। জিই বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতে বড় অবদান রেখে চলেছে। ইউএমপিএলের প্রকল্পের অংশীদার হতে পেরে জিই গর্বিত। কেন্দ্রটিতে জ্বালানি প্রাকৃতিক গ্যাস কম ব্যবহার হবে। এতে জ্বালানি কম ব্যবহার হওয়ায় গ্যাস বেঁচেও যাবে। কেন্দ্রটিতে উৎপাদিত বিদ্যুৎ প্রায় সাত লাখ বাড়িতে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।

এদিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ছিলেন মার্কিন দূতাবাসের অর্থনৈতিক ইউনিটের প্রধান জোসেফ গিবলিন, ইউএমপিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) চৌধুরী নাফিজ সরাফাত, চেয়ারম্যান মো. নূর আলী, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ জহির উদ্দিন মোল্লা এবং জিই (জেনারেল ইলেকট্রিক) গ্যাস পাওয়ার দক্ষিণ এশিয়ার সিইও দীপেশ নন্দা।

এর আগে, আজ সকাল ৯টায় ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টারে বিদ্যুৎকেন্দ্রে পৌঁছান পিটার হাস। সেখানে চৌধুরী নাফিজ সরাফাত তাকে স্বাগত জানান। বিদ্যুৎকেন্দ্রের অফিস প্রাঙ্গণে পৌঁছানোর পর পরিবেশ, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা টিম পিটার হাস ও অন্য অতিথিদের নিরাপত্তা সরঞ্জাম দেয়। বিদ্যুৎকেন্দ্রের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান জিই গ্যাস পাওয়ারের সাইট ম্যানেজার কালুম ডেভিড কর্নফর্থ রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে প্রকল্পের সর্বশেষ অবস্থার বর্ণনা দেন।

এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য স্ট্র্যাটেজিক ফাইন্যান্স লিমিটেড, ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস লিমিটেড ও জিই-এর কনসোর্টিয়াম ২০১৮ সালের ২৫ জুন জিইকে এ প্রকল্পের ঠিকাদার বা ইপিসি নিযুক্ত করে। পরে নেব্রাস পাওয়ার কিউ.পি.এস.সির প্রতিষ্ঠান নেব্রাস পাওয়ার ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্ট বি.ভি. ২৪ শতাংশ ইক্যুইটি অংশীদারত্ব নিয়ে প্রকল্পে যুক্ত হয়।

প্রকল্পের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে সরকার ও পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) বাস্তবায়ন চুক্তি (আইএ), বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডি) সঙ্গে পিপিএ (পাওয়ার পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্ট) এবং ২০১৯ সালের ২৪ জুলাই তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে গ্যাস সরবরাহ চুক্তি (জিএসএ) হয়। উদ্যোক্তা কোম্পানির সঙ্গে ২০১৯ সালের ৩০ আগস্ট টার্ন-কি ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল ইলেকট্রিকের (জিই) ঠিকাদারি চুক্তি হয়। জিই এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল যন্ত্রপাতি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান। প্রকল্প উদ্যোক্তাদের ২৫ শতাংশ ইক্যুইটি বিনিয়োগ রয়েছে। প্রকল্প ব্যয়ের বাকি ৭৫ শতাংশ স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক (সুইস ইসিই-এসইআরভি কভার লেন্ডার), এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি), জার্মান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (ডিইজি) এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ওএফআইডি) দিয়েছে।

ইতোমধ্যে, প্রকল্পের ৯২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে প্রকল্পটি বাণিজ্যিকভাবে বাস্তবায়িত হওয়ার কথা রয়েছে।

Place your advertisement here
Place your advertisement here