• সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ৮ ১৪৩১

  • || ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

Find us in facebook

অর্থনীতির চাকা ঘোরাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে নারীরা

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১১ মার্চ ২০২৩  

Find us in facebook

Find us in facebook

বাংলাদেশে কর্মজীবী নারীর সংখ্যা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী শ্রমবাজারে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনগুলোর একটি হচ্ছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারীর অংশগ্রহণ। ইতিবাচক বিষয় হচ্ছে, গ্রামীণ নারীদের শ্রমবাজারে অংশগ্রহণের হার শহরের নারীর তুলনায় বেশি। আবার পোশাক খাত ছাড়াও এখন হোটেল, রেস্টুরেন্ট, যোগাযোগ খাত, রিয়েল স্টেট সেবা, টেলিকমিউনিকেশন, ব্যাংকিং, ইনস্যুরেন্স খাতে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের মোট পোশাক শ্রমিকের মধ্যে নারীর সংখ্যা বেশি। পোশাক খাতের পরই প্রবাসে কর্মরত বাংলাদেশি নারী শ্রমিকরা দেশের অর্থনীতির চাকা ঘোরাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

১৯৯১ সাল থেকে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে মোট ৯ লাখ ৩৫ হাজার ৪৬৬ জন নারী প্রবাসে কাজ করতে গেছেন। নানারকম নির্যাতনের শিকার হয়েও প্রতি বছর এই নারীরা সৌদি আরব, জর্ডান, কাতার ও ওমানসহ বিভিন্ন দেশে কাজ করতে যাচ্ছেন। আবার কৃষি খাতেও নারীর অংশগ্রহণ উল্লেখ করার মতো। কৃষি তথ্য সার্ভিস থেকে প্রাপ্ত তথ্যে, দেশে মোট কর্মক্ষম নারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় কৃষিকাজে নিয়োজিত। আশার কথা হচ্ছে, প্রবাসী আয় প্রাপ্তির দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে অষ্টম। আর এ অবস্থান নিয়ে যেতে দেশের নারী শ্রমিকরাও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছেন। অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তারাও। 

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) সূত্রে, বর্তমানে দেশে ৩ লাখ মানুষ অনলাইনে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। আর এদের অর্ধেকই নারী ব্যবসায়ী বা উদ্যোক্তা। এই উদ্যোক্তারা নিজের পণ্য বিক্রির মাধ্যমে মাসে সর্বনিম্ন ১০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করছেন। ফেসবুকে নারী উদ্যোক্তাদের বড় পেজ উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই) ২০১৭ সালে যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে এই পেজের সদস্য সংখ্যা ১১ লাখের বেশি। দেশে গত এক দশকে অর্থনৈতিক কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ বাড়তি শ্রমশক্তির মধ্যে ৫০ লাখই নারী। শুধু করোনাকালীন প্রায় ১০ লাখ নারী উদ্যোক্তা গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত হন।

কর্মসংস্থানে নারীর অংশগ্রহণ বাড়লেও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। এখনো দেশে নারী-পুরুষের বেতন বৈষম্য রয়েছে। নারীর জন্য নিরাপদ কর্মপরিবেশের চ্যালেঞ্জ ছাড়াও কর্মজীবী মায়ের সন্তানের জন্য ডে-কেয়ার সুবিধা খুবই সীমিত। বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। আর পোশাক খাতের এই অভূতপূর্ব সাফল্য এসেছে নারী শ্রমিকদের কারণেই। বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার পেছনে শ্রমশক্তিতে নারীদের উচ্চতর অংশগ্রহণ একটি বড় ভূমিকা রাখছে।

বিগত এক দশকে বাংলাদেশ নারীর ক্ষমতায়নে বৈশ্বিক রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। নারীর অর্থনৈতিক উন্নয়নের কারণে বাংলাদেশ ক্রমেই অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সূচক বলছে, বাংলাদেশ লিঙ্গ সমতায় দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম স্থান অর্জন করেছে। আর এই সমতা নারীর অর্থনীতিতে অংশগ্রহণ, শিক্ষার হার, স্বাস্থ্যের উন্নতি এবং রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। দেশের জনসংখ্যার অর্ধেকই নারী। তাই নারীর অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ বৃদ্ধির কারণে পারিবারিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে নারীর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা পাচ্ছে। নারীর শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতির কারণে আগের তুলনায় কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণও বেড়েছে। জেন্ডার প্যারিটিতে আয়ের দিক থেকে বাংলাদেশ এশিয়ার অগ্রবর্তী দেশগুলোর কাছাকাছি। কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষ যখন একই পদবিতে কাজ করে তখন নারী-পুরুষের আয়ের বৈষম্য কমে আসে। তবে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে এখনো সব ধরনের কাজে নারীর অংশগ্রহণ হচ্ছে না। এখনো নির্দিষ্ট কিছু গত বাঁধা কাজেই নারীকে দেখা যাচ্ছে। তবে চাকরির বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে পুরুষের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এখনো নারীকে পিছিয়ে যেতে হচ্ছে। আর এমনটি হচ্ছে উচ্চতর শিক্ষায় নারীরা পুরুষের তুলনায় এখনো পিছিয়ে আছে বলে। এ জন্য পেশাদার চাকরিগুলোতে নারীর অংশগ্রহণ এখনো কম। দেশকে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাইলে নারী ও পুরুষের অবস্থা ও অবস্থানের ব্যবধান দ্রুতই কমিয়ে আনতে হবে।

Place your advertisement here
Place your advertisement here