• সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ৮ ১৪৩১

  • || ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

Find us in facebook

রোহিঙ্গাদের জন্য ৮৭৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তার আহ্বান

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৭ মার্চ ২০২৩  

Find us in facebook

Find us in facebook

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক কর্মকাণ্ডের যৌথ পরিকল্পনা বা জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান বাস্তবায়নে ৮৭৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর। রোহিঙ্গা শরণার্থী ও স্থানীয় বাংলাদেশি মিলিয়ে ১৪ লাখ ৭০ হাজার মানুষের জন্য এ অর্থ ব্যয় করা হবে। মঙ্গলবার (০৭ মার্চ) এ তথ্য জানিয়েছে ইউএনএইচসিআর।

বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধি ইয়োহানেস ভন ডার ক্লাউ জেনেভায় এক বৈঠকে বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের ষষ্ঠ বছরে শরণার্থীদের ও তাদের আশ্রয় দেওয়া স্থানীয় বাংলাদেশিদের জন্য টেকসই অর্থনৈতিক সহায়তা ও সমাধানের লক্ষ্যে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর ও সহযোগী সংস্থাগুলো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে পুনরায় আহ্বান জানাচ্ছে।

বাংলাদেশ সরকারের নেতৃত্বে ২০২৩ সালের জন্য মানবিক কর্মকাণ্ডের যৌথ পরিকল্পনা বা জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান বাস্তবায়নে রোহিঙ্গা শরণার্থী ও স্থানীয় বাংলাদেশি মিলিয়ে ১৪ লাখ ৭০ হাজার মানুষের জন্য ৮৭৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন। এই কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকবে মোট ১১৬টি সংস্থা, যার প্রায় অর্ধেক হচ্ছে বাংলাদেশি।

প্রস্তাবিত এই পরিকল্পনাটির লক্ষ্য হচ্ছে কক্সবাজারে ও ভাসান চরে আশ্রিত ৯ লাখ ৭৮ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং তাদের আশ্রয় দেওয়া চার লাখ ৯৫ হাজার বাংলাদেশিকে খাদ্য, বাসস্থান, স্বাস্থ্যসেবা, সুপেয় পানি, সুরক্ষা, শিক্ষা, জীবিকার সুযোগ ও দক্ষতা উন্নয়নমূলক কাজের মাধ্যমে সহায়তা দেওয়া।

মিয়ানমারের সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নারী, শিশু ও পুরুষদের প্রতিটি দিন কাটে অনিশ্চয়তার ধোঁয়াশায়। তারা নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে উদগ্রীব, কিন্তু সে ক্ষমতা তাদের নেই। অগত্যা তাদের বাস করতে হচ্ছে অতিরিক্ত ঘনবসতিপূর্ণ শরণার্থী শিবিরে, যেখানকার পরিবেশ কখনো কখনো বিপজ্জনক, আর বেঁচে থাকার জন্য তারা প্রায় সম্পূর্ণ মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল।

সংকটটি বর্তমানে দীর্ঘায়িত হয়ে পড়লেও, শরণার্থীদের চাহিদাগুলো পূরণ করা এখনো অতি জরুরি। এই শরণার্থীদের ৭৫ ভাগেরও বেশি নারী ও শিশু, যারা লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা ও শোষণের ক্রমবর্ধমান ঝুঁকিতে রয়েছে। ক্যাম্পে অর্ধেকেরও বেশি শরণার্থীর বয়স ১৮’র নিচে, আর তাদের ভবিষ্যৎ আজ স্থবির।

২০১৭ সালে এই মানবিক সংকটের শুরু থেকেই বাংলাদেশ সরকার, স্থানীয় জনগণ ও মানবিক সংস্থাগুলো পৃথিবীর বৃহত্তম শরণার্থী শিবিরে থাকা এই মানুষগুলোর সেবায় কাজ করে যাচ্ছে। তথাপি, বৈশ্বিক বাস্তুচ্যুতি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে রোহিঙ্গা শরণার্থী ও তাদের আশ্রয় প্রদানকারী স্থানীয় জনগণের কথা ভুলে যাওয়ার ঝুঁকিও বেড়ে যাচ্ছে।

তহবিল সংকটের কারণে পর্যাপ্ত পুষ্টি, বাসস্থানের উপকরণ, পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা ও জীবিকার সুযোগ কমার মতো অনেক চ্যালেঞ্জ এখন প্রতিদিনই এই শরণার্থীদের মোকাবিলা করতে হচ্ছে।

অপর্যাপ্ত তহবিলের কারণে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ইতোমধ্যেই ক্যাম্পের সব রোহিঙ্গার জীবন রক্ষাকারী খাদ্য সহায়তা কমাতে বাধ্য হয়েছে। মানবিক সংস্থাগুলোর সম্মিলিত প্রচেষ্টার পরও ৪৫ শতাংশ রোহিঙ্গা পরিবার সুষম খাবার খেতে পারছে না, আর অপুষ্টির হারও ব্যাপক। খাদ্যের বরাদ্দ কমানোর ফল স্বরূপ খুব স্বাভাবিকভাবেই সামনে দেখা যেতে পারে আরও অপুষ্টি, স্বাস্থ্য সমস্যা, পড়ালেখা থেকে শিশুদের ঝরে পড়া, বাল্য বিয়ের নতুন নতুন ঘটনা, শিশুশ্রম ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা।

এ কারণে জীবন রক্ষাকারী ও জীবন ধারণকারী সহায়তাগুলো চালু রাখতে আর্থিক সহায়তা জারি রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর সঙ্গে প্রয়োজন শিক্ষা, দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ ও জীবিকার সুযোগ; যেন শরণার্থীরা তাদের কিছু মৌলিক প্রয়োজন নিজেরাই মেটাতে পারে। ভাসান চরে স্থানান্তরিত প্রায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গার জীবিকামূলক কাজ শুরুর জন্য প্রয়োজন উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ, যা চরের এই প্রকল্পকে টেকসই করার একটি পূর্বশর্ত।

দীর্ঘ শরণার্থী জীবন ও ক্যাম্পের পরিস্থিতির অবনতির কারণে রোহিঙ্গারা একটু ভালো ভবিষ্যতের আশায় ক্রমবর্ধমান হারে বিপজ্জনক উপায়ে সাগর পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করছে। শুধু গত বছরেই তিন হাজার ৫০০ জনেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী আন্দামান সাগর ও বঙ্গোপসাগর পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করেছে এবং তাদের প্রায় ১০ শতাংশ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে কিংবা হারিয়ে গেছে।

রোহিঙ্গা সংকটের চূড়ান্ত সমাধান মিয়ানমারেই নিহিত। অনেক রোহিঙ্গা শরণার্থীর কাছে আমরা শুনি প্রত্যাবাসনের অনুকূল পরিবেশ তৈরি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নিজ দেশে ফিরতে চাওয়ার আকূলতা। কিন্তু নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবাসনের সম্ভাবনা নিকট ভবিষ্যতে দেখা যাচ্ছে না। সে জন্যেই প্রত্যাবাসনের অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত মিয়ানমারকে দ্রুত সাহায্য করা, এবং রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরার অধিকার সমুন্নত রাখতে কাজ করে যাওয়া। ঠিক একই সঙ্গে রোহিঙ্গারা অধিকার নিয়ে নিজ দেশে ফেরার আগ পর্যন্ত ক্যাম্পে তাদের কার্যকরী সুরক্ষা ও জীবন রক্ষাকারী সহায়তা দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাহায্য প্রয়োজন।

ভৌগলিক অবস্থানের কারণে ক্যাম্পে রোহিঙ্গা শরণার্থী ও তাদের আশপাশের স্থানীয়রা প্রতি বছর ভারী মৌসুমী বৃষ্টি ও সাইক্লোনের উল্লেখযোগ্য ঝুঁকিতে থাকে। এই জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যানের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে দুর্যোগ মোকাবিলা ও এর ব্যবস্থাপনা আরো শক্তিশালী করা এবং পুনঃবনায়ন, পুনঃব্যবহার্য ও পরিচ্ছন্ন জ্বালানির উত্তরোত্তর প্রচারণার মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা করা। শরণার্থীদের রান্নার জন্য গ্যাস- যা স্থানীয় পরিবেশের ওপর চাপ কমিয়েছে দারুণভাবে তা চালু রাখতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন।

Place your advertisement here
Place your advertisement here