• রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ৭ ১৪৩১

  • || ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

Find us in facebook

আরো ৭০ হাজার রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নেওয়ার চিন্তা

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৩ মার্চ ২০২৩  

Find us in facebook

Find us in facebook

কক্সবাজারের ওপর চাপ কমাতে আরো ৭০ হাজার রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর ভাসানচরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা করছে সরকার। ওই রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর ও ভাসানচরে আরো অবকাঠামো নির্মাণে সরকার বন্ধু রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছে সহযোগিতা চেয়েছে। ভাসানচরে বর্তমানে প্রায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গা আছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরীন গতকাল বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার সভাপতিত্বে বাংলাদেশে অবস্থানরত জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও মানবিক সহায়তা কার্যক্রমবিষয়ক সভা গতকাল সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই সভায় ঢাকায় বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার প্রধানসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দপ্তর ও সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

তিনি আরো বলেন, নেদারল্যান্ডসের পার্লামেন্ট সদস্যদের একটি প্রতিনিধিদল গত বুধবার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির সফর করেছে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের স্বদেশে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে।

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গতকাল ‘জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও মানবিক সহায়তা কার্যক্রমবিষয়ক সভা’ শেষে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া জানান, বন্ধু রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছে দুটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রথম প্রস্তাব হলো, রোহিঙ্গাদের কক্সবাজার থেকে ভাসানচরে নেওয়ার খরচ বহন করা। আর দ্বিতীয় প্রস্তাব হলো রোহিঙ্গাদের জন্য ভাসানচরে আরো নতুন অবকাঠামো নির্মাণ করা।

প্রথম প্রস্তাব প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব বলেন, ‘সরকার ভাসানচরে এক লাখ লোকের বসবাসের জন্য আবাসন তৈরি করেছে। এরই মধ্যে সেখানে ৩০ হাজার রোহিঙ্গা নেওয়া হয়েছে। আরো ৭০ হাজার রোহিঙ্গা সেখানে আমরা নিতে চাই। এই স্থানান্তর ব্যয়বহুল বিষয়। বন্ধু রাষ্ট্র যারা আমাদের সঙ্গে কাজ করে, রোহিঙ্গাদের কক্সবাজার থেকে ভাসানচরে নেওয়ার খরচ তারা যেন বহন করে। প্রধানমন্ত্রী এটি আন্তরিকভাবে চাইছেন।

দ্বিতীয় প্রস্তাব প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব বলেন, ‘ভাসানচরে যে জমি আছে, তার এক-তৃতীয়াংশ আমরা ব্যবহার করেছি। বাকি দুই ভাগ জায়গায়ও প্রধানমন্ত্রী চাচ্ছেন অবকাঠামো নির্মিত হোক এবং আরো রোহিঙ্গা সেখানে নেওয়া হোক।’ এই নতুন অবকাঠামো তৈরিতে সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ।

কক্সবাজার রোহিঙ্গা শিবিরে অত্যধিক ঘনবসতি ও তাদের মানবেতর জীবন যাপনের কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের কক্সবাজারে অবস্থানের কারণে সেখানে বেশ কিছু সামাজিক সমস্যা তৈরি হচ্ছে। বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে বিরোধ তৈরি হচ্ছে, মারামারি হচ্ছে। সেখানে অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা ঘটছে, নিজেদের মধ্যে হত্যাকাণ্ড ঘটছে, অপহরণ আছে, পাচার আছে, নিজেদের বিরোধের কারণে জিম্মি করার ঘটনা ঘটছে। ফলে এর একটা সামাজিক কুফল আছে। অনেকে বিভিন্ন ধরনের মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এসব কারণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বলেছি, আমরা বেশি মানুষকে ভাসানচরে নিয়ে যাব। তাদের নিরাপত্তা বেশি হবে, তেমনি তাদের সন্তানদের বেড়ে ওঠা ভালো হবে।’ 

ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রদান এবং হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল পালনসহ কৃষি কাজের সুযোগ ও অধিকতর ভালো পরিবেশ ও জীবন যাপনের সুযোগের কথা জানান মুখ্য সচিব। এ ছাড়া ভাসানচরে নেওয়া রোহিঙ্গাদের কিছুদিন পর পর কক্সবাজারে স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে নিয়ে আসার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।

রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক কার্যক্রম পরিচালনায় প্রত্যাশা অনুযায়ী সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে মানবিক সহায়তাগুলো পেয়ে থাকি। ২০২২ সালে রোহিঙ্গাদের নিয়ে মানবিক কাজ পরিচালনার জন্য বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও আমাদের বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর কাছে আমাদের দিক থেকে চাওয়া ছিল ৮৭৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। কিন্তু তার ৬২ শতাংশ পাওয়া গেছে। অর্থাৎ প্রত্যাশা অনুযায়ী আমরা বৈদেশিক সহায়তা পাইনি। ৫৮৬ মিলিয়ন ডলারের মতো পেয়েছি। এই সহায়তা আরো বাড়াতে বলেছি।’

তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, শুধু ভাসানচরকে তৈরি করার জন্য সরকার প্রায় তিন হাজার ১০০ কোটি টাকা ব্যয় করেছে,  যা ৫৫৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৭ থেকে গত বছর পর্যন্ত নিরাপত্তা, আইন-শৃঙ্খলা, জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি, পরিবেশের ক্ষতি এগুলো বাদ দিয়েও বিভিন্ন সময় সরকারের প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা এই কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের পেছনে খরচ হয়েছে, যা দুই বিলিয়ন ডলারেরও বেশি।

এ বিষয়ে তিনি আরো বলেন, ‘এই মানবিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রায় ২২টি সংস্থা বিভিন্ন ধরনের সেবা দিচ্ছে। এখানে সরকারের নিরাপত্তা, প্রশাসন, ম্যানেজমেন্ট, বিভিন্ন সেবা দেওয়ার জন্য প্রায় ১০ হাজার সরকারি কর্মচারী টেকনাফ, উখিয়া ও নোয়াখালীর ভাসানচরে কাজ করছেন। এই হিসাব কিন্তু আমাদের দেওয়া হিসাবের বাইরে।’

Place your advertisement here
Place your advertisement here