• রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ৭ ১৪৩১

  • || ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

Find us in facebook

সিনহার যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও বাড়ি জব্দের নির্দেশ

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১ মার্চ ২০২৩  

Find us in facebook

Find us in facebook

সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহা ও তার ছোট ভাই অনন্ত কুমার সিনহার যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং সেখানকার একটি বাড়ি জব্দের আদেশ দিয়েছে আদালত। দুদকের আবেদনের পরিপ্রক্ষিতে ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. আছাদুজ্জামান সম্প্রতি এ আদেশ দেন।

দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বলেন, “আদেশটি মৌখিকভাবে দেওয়া হয়েছে।”

জব্দ হওয়া তিন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হল- সিটিজেন ব্যাংকের ম্যাসাচুসেটসের বস্টন শাখার ব্যক্তিগত চেকিং অ্যাকাউন্ট, ম্যাসাচুসেটসের বস্টনে সেইফ ডিপোজিট বক্স এবং ভ্যালি ন্যাশনাল ব্যাংকে অনন্ত কুমার সিনহার অ্যাকাউন্ট। এছাড়া সম্পত্তি হিসেবে নিউ জার্সির জ্যাসপার স্ট্রিটের ১৭৯ নম্বরের বাড়ি জব্দের আদেশ হয়েছে।

গত ২০ ফেব্রুয়ারি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও বাড়ি জব্দ চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান। দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল সেদিন আবেদনটির শুনানি করেন।

২০২২ সালের ৩১ মার্চ দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ কমিশনের উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান মামলাটি দায়ের করেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, প্রধান বিচারপতি থাকাকালে এস কে সিনহা ‘অবৈধভাবে’ অর্থ উপার্জন করে হুন্ডিসহ বিভিন্ন মাধ্যমে বিদেশে ছোট ভাই অনন্ত কুমার সিনহার কাছে তা ‘পাচার করে’ নিউ জার্সির জ্যাসপার স্ট্রিটের বাড়িটি কেনেন।

সাবেক বিচারপতি সিনহার ছোট ভাই অনন্ত কুমার সিনহা যুক্তরাষ্ট্রে একজন ডেন্টিস্ট হিসেবে কর্মরত। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের একটি ব্যাংক থেকে ৩০ বছরের জন্য ১ লাখ ৮৭ হাজার ৫০ ডলার ঋণ নিয়ে ১ লাখ ৪৫ হাজার ডলার দিয়ে এর আগে সেখানে একটি বাড়ি কিনেছেন। পরে ২০১৮ সালের ১২ জুনে ২ লাখ ৮০ হাজার ডলার নগদ অর্থ পরিশোধ করে আরেকটি বাড়ি কেনেন।

অনন্ত কুমার সিনহার নামে নিউ জার্সির প্যাটারসনের ভ্যালি ন্যাশনাল ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ২০১৮ সালের ৫ মার্চ থেকে একই বছরের ২০ জুন পর্যন্ত মোট ২ লাখ ৫৬ হাজার ৪৬৮ ডলার জমা হয়। ওই অর্থ ইন্দোনেশিয়া ও কানাডা হয়ে একটি গ্রুপের মাধ্যমে সেখানে যায়।

ওই বাড়িটি কেনার জন্য অনন্ত কুমার ১ লাখ ৫৭ হাজার ৯০ ডলার সংগ্রহ করতে তার বড় ভাই এস কে সিনহাকে নিয়ে ভ্যালি ন্যাশনাল ব্যাংকে যান এবং এস কে সিনহা ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে জানান, আমেরিকার প্যাটারসন এলাকায় বাড়ি কেনার জন্য বন্ধুর কাছ থেকে তিনি ফান্ড পেয়েছেন।

এজাহারে আরও বলা হয়, “প্রকৃতপক্ষে এসকে সিনহা বাংলাদেশে প্রধান বিচারপতি থাকাকালে বিভিন্নভাবে অবৈধ টাকা অর্জন করে তা হুন্ডিসহ বিভিন্ন কায়দায় আমেরিকায় পাচার করে তার ছোট ভাইয়ের অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করেন এবং তা দিয়েই ১৭৯, জ্যাপার স্ট্রিট, প্যাটারসন নিউ জার্সি ০৭৫২২ ঠিকানায় বাড়ি কেনেন।”

বাড়িটি ছোট ভাই অনন্ত কুমার সিনহার নামে হলেও ‘পরোক্ষভাবে’ এস কে সিনহার বলেও মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। মামলায় তাদের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন- ২০১২ এর ৪(২) ও (৩) ধারা ও ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

এর আগে ২০২১ সালের ৯ নভেম্বর ফারমার্স ব্যাংক (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) থেকে চার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ ও পাচারের দায়ে দুদকের এক মামলায় এসকে সিনহাকে ১১ বছরের কারাদণ্ড দেয় ঢাকার একটি আদালত।

একই বছরের ৭ অক্টোবর ঢাকার উত্তরায় ‘বেআইনিভাবে’ প্লট বরাদ্দ নিয়ে ‘অবৈধ অর্থের মাধ্যমে’ সেখানে নয়তলা ভবন করার অভিযোগে এস কে সিনহার বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করে দুদক।

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় এবং কিছু পর্যবেক্ষণের কারণে ‘তোপের মুখে’ ২০১৭ সালের অক্টোবরের শুরুতে ছুটিতে যান তখনকার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা। পরে বিদেশ থেকেই তিনি পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন।

দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে আসা বিচারপতি সিনহা যুক্তরাষ্ট্রে বসেই ২০১৮ সালে একটি বই প্রকাশ করেন। তাতে তিনি দাবি করেন, তাকে ‘পদত্যাগে বাধ্য করে নির্বাসনে’ পাঠানো হয়েছে।

ওই বছর ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছিলেন এস কে সিনহা। নিউজার্সিতে ছোট ভাই অনন্ত কুমার সিনহার নামে কেনা একটি বাড়িতেই সে সময় তিনি থাকছিলেন।

পরে ২০১৯ সালের জুলাই মাসে খবর আসে সিনহা যুক্তরাষ্ট্র থেকে কানাডায় গিয়ে সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন।

বিচারপতি সিনহা ছুটি নিয়ে বিদেশ যাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অর্থ পাচার, আর্থিক অনিয়ম ও নৈতিক স্খলনসহ সুনির্দিষ্ট ১১টি অভিযোগ পাওয়ার কথা সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল। বাকি বিষয়গুলো নিয়ে পরে আর কোনো অগ্রগতি হয়নি।

Place your advertisement here
Place your advertisement here