• রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ৭ ১৪৩১

  • || ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

Find us in facebook

`বাংলাদেশ হৃদরোগের চিকিৎসায় স্বাবলম্বী`

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩  

Find us in facebook

Find us in facebook

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার স্বাস্থ্যসেবাকে আরও সাশ্রয়ী করেছে এবং এটিকে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি হৃদরোগের চিকিৎসায় বাংলাদেশকে প্রায় স্বনির্ভর করে তুলেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন হৃদরোগের চিকিৎসায় প্রায় স্বাবলম্বী। হৃদরোগের ৯৫ থেকে ৯৮ শতাংশ চিকিৎসার সক্ষমতা রয়েছে এবং এ লক্ষে দেশে দক্ষ জনশক্তি, আধুনিক প্রযুক্তি এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি রয়েছে।

রাজধানীর প্যান-প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে শুক্রবার ‘বাংলাদেশ কার্ডিওভাসকুলার রিসার্চ ফাউন্ডেশন’ আয়োজিত তৃতীয় বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে প্রচারিত আগে রেকর্ড করা এক ভিডিও বার্তায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রতিবছর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে ১৭.৯ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যুর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সারা বিশ্বে মানুষের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হলো হৃদরোগ।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার প্রায় ২৭ শতাংশ। যেখানে প্রতি হাজারে ১০ জন শিশু হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছে। প্রতি পাঁচজন যুবকের মধ্যে একজন হৃদরোগের ঝুঁকিতে রয়েছেন। তিনি বলেন, খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক ব্যায়ামের অভাব, ধূমপান ও ডায়াবেটিসের কারণে হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। হৃদরোগীদের চিকিৎসা সুবিধা উন্নত করার পাশাপাশি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার ওপর আমাদের নজর দিতে হবে।

স্বাস্থ্য খাতের সার্বিক উন্নয়নে তার সরকারের পদক্ষেপের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও গত ১৪ বছরে স্বাস্থ্য খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ পর্যন্ত ১১টি স্নাতকোত্তর ‘সুপার বিশেষায়িত হাসপাতাল’, কার্ডিওভাসকুলার হাসপাতাল, বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, ক্যানসার হাসপাতাল, নিউরোসায়েন্স হাসপাতাল এবং অন্যান্য হাসপাতাল স্থাপনের পাশাপাশি সারা দেশে ৬০০টিরও বেশি হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, গ্রামের মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে আমরা ১৮ হাজার ৫০০টি কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছি। হাসপাতাল থেকে ত্রিশ প্রকার ওষুধ বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে।

সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা ব্যাপকভাবে উন্নত হয়েছে এবং চিকিৎসকদের দক্ষতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। আগে যেসব রোগের চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে হতো সেসব রোগের চিকিৎসা এখন দেশেই হচ্ছে। তিনি বলেন, বিভিন্ন জটিল রোগ যেমন কিডনি, লিভার, বাইপাস, নিউরো সার্জারি এবং বোন-ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট এখন বাংলাদেশে সফলভাবে চিকিৎসা হচ্ছে। দেশের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকরা এখন সফলভাবে হৃদরোগের চিকিৎসা দিচ্ছেন যার সুফল জনগণ পাচ্ছে এবং এর ফলে দেশের বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসার জন্য একটি সম্পূর্ণ কার্ডিয়াক ইউনিট স্থাপনের কাজ চলছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের স্বাস্থ্য খাতের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন যার ভিত্তিতে বর্তমানে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা চলছে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিকমানের বিশেষজ্ঞ তৈরির জন্য স্নাতকোত্তর পর্যায়ে চিকিৎসকদের উচ্চতর প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য আইপিজিএমআর এবং বাংলাদেশ কলেজ অফ ফিজিশিয়ান অ্যান্ড সার্জন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, বৈজ্ঞানিক কমিটির উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ এবং ইন্টারন্যাশনাল একাডেমি কোর্সের চেয়ারম্যান ডা. রাজেশ এম ডেভ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। বাংলাদেশ কার্ডিওভাসকুলার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. এসএম মোস্তফা জামান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।

কানাডার উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুক্রবার কানাডার উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিশেষ করে কৃষি প্রক্রিয়াকরণ খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। কানাডার আন্তর্জাতিক উন্নয়ন মন্ত্রী হারজিত এস সজ্জন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করলে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা লেখক মো. নজরুল ইসলাম বাসসকে এ তথ্য জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে সারা দেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করছে। তিনি বলেন, কানাডিয়ান বিনিয়োগকারীরা অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্প বা অন্য কোনো শিল্প গড়ে তুলতে বিনিয়োগ করতে পারেন। তিনি বলেন, তার সরকার স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি প্রক্রিয়াজাত খাবার রপ্তানি করার জন্য কৃষি-প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের উন্নয়নের ওপর জোর দিচ্ছে।

বাংলাদেশ বৃহৎ জনসংখ্যার একটি ছোট দেশ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার স্থানীয় জনগণকে খাদ্য জোগানো এবং উদ্বৃত্ত খাদ্য রপ্তানি বা খাদ্যের জন্য অন্যান্য দেশকে সহায়তা করার লক্ষ্যে একটি ছোট এলাকায় ফসল উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করার চেষ্টা করছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ অনেকাংশে সফল কারণ দেশের বিজ্ঞানীরা অনেক উচ্চ ফলনশীল ফসলের জাত উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছে।

দেশে বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলে একসময় বিপুল জমি অনাবাদি ছিল। এসব জমি লবণাক্ততা-সহনশীল জাত, খরা-সহনশীল জাত এবং পানি-সহনশীল জাত উদ্ভাবনের ফলে চাষের আওতায় আনা হয়েছে।

সফররত কানাডার মন্ত্রী বলেন, তার দেশ বাংলাদেশের সঙ্গে কৃষি সহযোগিতা বিশেষ করে খাদ্য সংরক্ষণ ও ক্ষুদ্র কৃষকদের উন্নয়নে আগ্রহী। তিনি কৃষি ও শিক্ষায় বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রশংসা করার পাশাপাশি শেখ হাসিনার বাসভবন গণভবন কমপ্লেক্সে একটি বড় কৃষি খামার গড়ে তোলার প্রশংসা করেন।

শেখ হাসিনা এ প্রসঙ্গে কানাডার মন্ত্রীকে ক্ষুদ্র কৃষকদের উন্নয়নে তার সরকারের পদক্ষেপ সম্পর্কে অবহিত করেন।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে উন্নয়ন সহযোগীদের সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি কক্সবাজার থেকে আরও রোহিঙ্গাদের তাদের অস্থায়ী আশ্রয়ের জন্য স্থানান্তর করার লক্ষ্যে নোয়াখালীর দ্বীপ ভাষান চরে আরও বেশি এলাকার উন্নয়ন ঘটাতে তাদের সহায়তা চেয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কক্সবাজারে কিছু রোহিঙ্গা মানব ও মাদক পাচার এবং অভ্যন্তরীণ কোন্দলের মতো নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, নারীদের বিশেষ করে শিশু ও কিশোরী মেয়েদের জন্য সেখানে অমানবিক পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। ভাসান চরে গেলে তারা সুষ্ঠু পরিবেশ পাবে।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এম তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং বাংলাদেশে কানাডার হাইকমিশনার লিলি নিকোলস এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

Place your advertisement here
Place your advertisement here