• রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ৬ ১৪৩১

  • || ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

Find us in facebook

দেশে ফিরছে মেয়াদোত্তীর্ণ বকেয়া রপ্তানি আয়

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩  

Find us in facebook

Find us in facebook

              
বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎপরতায় দেশে ফিরছে মেয়াদোত্তীর্ণ বকেয়া রপ্তানি আয়। গত পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) ব্যাংকগুলোর কাছে ৫৪ কোটি ৮ লাখ ডলার বকেয়া ছিল। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে দুই দফায় ব্যাংকগুলো ৪৩ কোটি ৯ লাখ ডলার দেশে নিয়ে এসেছে। তবে এখনো বকেয়া রয়েছে প্রায় ১০ কোটি ডলার।

দীর্ঘদিন ধরে দেশে ডলারের সংকটের কারণে আমদানিকারকরা রয়েছেন চাপে। কাঁচামাল আমদানি ও শিল্পোৎপাদন ব্যাহত হওয়ারও আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। সংকট মোকাবিলায় যথাসময়ে রপ্তানি আয় দেশে আনার ওপর জোর দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর অংশ হিসেবে গত ২৯ জানুয়ারি বিভিন্ন ব্যাংককে মেয়াদোত্তীর্ণ রপ্তানি আয় (ওভারডিউ এক্সপোর্ট প্রসিড) যত দ্রুত সম্ভব দেশে আনার উদ্যোগ নিতে নির্দেশনা দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে সার্বিক পরিস্থিতির প্রয়োজনীয়তা এবং গুরুত্ব তুলে ধরে দেশের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে অতি-দরকারি এসব বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আনার বিষয়ে তাগিদ দেওয়া হয়। গেল ১২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ রপ্তানি আয়ের পরিমাণ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দিতেও বলা হয়েছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমন নির্দেশনার পরই ব্যাংকগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ রপ্তানি আয় ফিরিয়ে আনছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ১২০ দিনের নির্ধারিত মেয়াদ পেরোনোর পরও ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত দেশে আসেনি ৫৪৮ মিলিয়ন ডলার। সে কারণে সব ব্যাংককে চিঠি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর প্রথম ধাপে ব্যাংকগুলো ১৪৬ মিলিয়ন ডলার দেশে নিয়ে আসছে। পরে ১৬টি ব্যাংককে আবার চিঠি দিলে দ্বিতীয় দফায় তারা ২৯৩ মিলিয়ন ডলার দেশে নিয়ে আসছে। সব মিলিয়ে ৪৩৯ ডলার দেশে আসছে। তবে এখনো দেশে আসেনি ১০৮ মিলিয়ন ডলার। এই আয় আনতে আবারও ব্যাংকগুলোকে চিঠি দেওয়া হবে বলে জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, পণ্য জাহাজীকরণ শেষে রপ্তানির নথিপত্র আমদানিকারকের ব্যাংকে পাঠানোর পরের দিন থেকে সর্বোচ্চ ১২০ দিনের মধ্যে মূল্য দেশে নিয়ে আসার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অন্যদিকে রপ্তানি আয় দেশে আসার ৩০ দিনের মধ্যে রপ্তানি বিল নগদায়নের নির্দেশনা রয়েছে। বর্তমান রপ্তানি বিল নগদায়নে প্রতি ডলারে ১০৩ টাকা পাচ্ছেন রপ্তানিকারকরা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, সঠিক সময়ে রপ্তানি আয় দেশে আনা গেলে বাজারে বৈদেশিক মুদ্রার তারল্য বাড়বে। কমে আসবে ডলার সংকট। এ কারণেই ব্যাংকগুলোতে তদারকি বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, দেশে ডলার সংকট প্রকট হওয়ার পর গভর্নরের নির্দেশ আমদানির পাশাপাশি রপ্তানির তথ্যও নিয়মিত তদারকি করা হচ্ছে। এই তদারকির ফলেই ব্যাংকগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ আয় দেশে ফিরিয়ে আনছে। খুব শিগগিরই ডলারের বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে।

নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্য রপ্তানির বিপরীতে দেশে যে পরিমাণ অর্থ আসার কথা, অনেক ক্ষেত্রেই তার ব্যত্যয় ঘটছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্য এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত বছরের ডিসেম্বর নাগাদ ১২০ দিনের নির্ধারিত মেয়াদ পেরোনোর পরও দেশে আসেনি ১.৪২ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়। এর মধ্যে প্রায় ২৭৬ মিলিয়ন ডলার শর্ট শিপমেন্টের (রপ্তানি পণ্যে ঘাটতি) অভিযোগে আটকে আছে। আমদানিকারক দেউলিয়া হওয়ার কারণে আটকে গেছে ৭৫ মিলিয়ন ডলার; আইনগত জটিলতায় আটকে আছে ২৫২ মিলিয়ন ডলার। এ ছাড়া ১২২ মিলিয়ন ডলার বিবিধ কারণে আটকে আছে। আর ৭০০ মিলিয়ন ডলারের সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে, ডলারের উচ্চ বিনিময় হারের সুবিধা নিতে ইচ্ছে করেই আয় প্রত্যাবাসনে দেরি করছেন রপ্তানিকারকরা। পরিস্থিতির সুযোগ নিতে ব্যবসায়ীরা নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী রপ্তানি আয় দেশে আনছেন অথবা যখন বেশি দাম পাওয়া যাচ্ছে তখনই তারা রপ্তানি আয় আনছেন। এতে ব্যাংকগুলোতে ডলার সংকট আরও তীব্র হচ্ছে।

যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রপ্তানি আয় দেশে না আনা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এর ফলে ওই রপ্তানিকারককে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) থেকে অর্থায়ন করা হয় না। নগদ প্রণোদনা দেওয়া হয় না। পরে এলসি খোলার সময় মার্জিন সুবিধাও বন্ধ করা হয়ে থাকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বিভিন্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে এক বৈঠকে রপ্তানি আয় দ্রুত সময়ের মধ্যে দেশে আনার নির্দেশনা দেন। তিনি বলেন, যত দ্রুত রপ্তানি আয় দেশে আসবে তত দ্রুত ডলারের বাজারে স্থিতিশীলতা আসবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ উদ্যোগে রপ্তানিকারকদের আয় দ্রুত দেশে চলে আসছে। এর ফলে খুব শিগগিরই দেশে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে স্থিতিশীলতা আসবে। তিনি বলেন, রপ্তানিকারকদের ব্যাক টু ব্যাক এলসি সুবিধা দিতে বিপুল পরিমাণ ডলার চলে যায়। এজন্য রপ্তানিকারকদেরও রপ্তানির আয় যাতে সময়মতো দেশে আসে, সে দায়িত্ব নিতে হবে। তা না হলে বৈদেশিক মুদ্রার ইনফ্লো ও আউট ফ্লোতে ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়।

গত কয়েক মাস ধরে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারে অস্থিরতা চলছে। গত ৬ মাসে ডলারের বিপরীতে টাকার মান ২০ শতাংশের বেশি কমেছে। ডলার সংকটে পড়ে অনেক ব্যাংক এলসি খুলতে পারছে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার মজুত থেকে ব্যাংকগুলোকে ডলার সরবরাহ করছে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের এ পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক ৯ বিলিয়নের বেশি ডলার ব্যাংকগুলোর কাছে বিক্রি করেছে। এর পরও ডলারের সংকট দূর হয়নি।

Place your advertisement here
Place your advertisement here