• মঙ্গলবার ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ৯ ১৪৩১

  • || ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

Find us in facebook

যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন গুলিবিদ্ধ আবু সাঈদ

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪  

Find us in facebook

Find us in facebook

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন শিক্ষার্থী আবু সাঈদ (২৫)। তার ডান পা থেকে দুই দফা অস্ত্রোপচারে বের করা হয় ১২টি গুলি। ত‌বে এখনো রয়ে গেছে আরও ৩৮‌টি গুলি। এতে পা‌য়ের রক্ত চলাচল ব‌্যহত হ‌চ্ছে। ফু‌লে উঠেছে পা। বন্ধ হ‌য়ে যায় স্বাভাবিক চলা‌ফেরা। পায়ের তীব্র ব্যথা সহ্য করতে না ‌পে‌রে হাসপাতা‌লে যন্ত্রণায় কাতরা‌চ্ছেন গুলিবিদ্ধ এই শিক্ষার্থী। ডান পা কোনোদিন স্বাভাবিক হবে কিনা সেটা নিয়েও শঙ্কায় আবু সাঈদ ও তার পরিবারের সদস্যরা।


চিকিৎসকেরা বলেছেন, ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে পা‌য়ের হা‌ড়ের কাছাকা‌ছি গু‌লি চ‌লে যাওয়ায় দেশে এ গুলি বের করার সুযোগ নেই। গুলি ‌বের কর‌তে গে‌লে পা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হ‌য়ে যে‌তে পারে। তবে বিদেশে উন্নত চিকিৎসায় বের করা যেতে পারে এ সব গু‌লি।


আবু সাঈদের বাড়ি ঠাকুরগাঁও সদ‌রের জামালপুর ইউ‌নিয়‌নের রামপুর গ্রা‌মে। বাবার নাম জুল‌ফিকার আলী। এক ভাই ও এক বোনের মধ্যে সাঈদ বড়। তিনি সদ‌রের শীবগঞ্জ ডিগ্রী ক‌লেজ থে‌কে ২০২৩ সা‌লে ডিগ্রী পাশ ক‌রেন। বাবা জুল‌ফিকার আলী হো‌মিও চি‌কিৎসক। বাবার কোনো রকম রোজগা‌রে চলে তা‌দের পরিবার। গুলিবিদ্ধ হওয়ার বিষয়ে আবু সাঈদ বলেন, গত ৪ আগস্ট ছাত্রদের যৌক্তিক দাবির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে  বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেন তিনি। এ দিন দুপু‌রে বি‌ক্ষোভ মি‌ছিল নি‌য়ে শহ‌রের কোর্টচত্ব‌রে দি‌কে গে‌লে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। সে সময় পু‌লি‌শের গু‌লি‌তে ডান পা‌য়ে ৫০‌টি ছররা বুলেট লাগে। মুহূর্তেই তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। আশপাশের লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। পায়ে ব্যান্ডেজ পেঁচিয়ে ওই দিনই তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে ক্ষতস্থান শুকানোর পর অস্ত্রোপচার করার কথা জানান চিকিৎসক। টাকার অভাবে উন্নত চিকিৎসা নিতে পারেননি।

সাঈদের বাবা জুল‌ফিকার আলী ব‌লেন, গত ৬ আগস্ট এক‌টি প্রাই‌ভেট ক্লি‌নি‌কে ভ‌র্তি ক‌রে ছে‌লের চি‌কিৎসা করান। প‌রে সেখান থে‌কে দিনাজপুর এম আব্দুর র‌হিম মে‌ডি‌কেলে নি‌য়ে যাই। সেখা‌নে অস্ত্রপচা‌রে দুই দফা ১২‌টি গু‌লি বের ক‌রেন চিকিৎসকেরা। এরপর ঢাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্বিদ্যালয় হাসপাতালে নি‌য়ে গে‌লে চি‌কিৎসকরা জানান, অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে আর একটি গুলিও বের করা সম্ভব না। কিছু‌দিন থাকার প‌রে হাসপাতাল থে‌কে ছাড়পত্র দেয়। ছেলের চিকিৎসার জন্য তারা দেশে সাধ্যমতো চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি। পরিপূর্ণ চিকিৎসার জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। আমাদের এত টাকা নেই।

এখনো স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারছেন না জা‌নি‌য়ে আবু সাঈদ ব‌লেন, হাট‌তে গে‌লে প্রচণ্ড ব‌্যাথা ক‌রে। পা ফু‌লে যাওয়ায় নড়াচড়াও করা যায় না। যন্ত্রণায় রাতে ঘুমাতে পারি না। এ অবস্থায় গত রোববার আবারও দিনাজপুর মে‌ডি‌কে‌লে ভ‌র্তি হই। চি‌কিৎসকরা জা‌নি‌য়েছেন, দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসা করা গেলে হয়তো বের করা যেতে পারে গু‌লি।

চো‌খের পা‌নি ছে‌ড়ে দি‌য়ে সাঈদের মা বিল‌কিস বানু বলেন, এখন চিকিৎসার সব খরচ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বহন করছে। বর্তমান সরকারের কাছে আমার একটাই চাওয়া প্রয়োজনে দেশের বাইরে নিয়ে হলেও যেন তার এক মাত্র সন্তা‌নের গুলি গু‌লো বের করে দেওয়া হয়।

প্রতিবেশী স্কুল শিক্ষক জয়নাল আ‌বেদীন বলেন, সাঈদের পরিবার খুবই দরিদ্র। তাঁর চিকিৎসা নিয়ে পরিবার খুবই চিন্তিত। তাদের পক্ষে চিকিৎসা করানো সম্ভব নয়। সমাজে যারা বিত্তবান আছেন, তাঁদের এগিয়ে আসা দরকার। যাতে এ তরুণ ছে‌লে‌টি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারেন।

Place your advertisement here
Place your advertisement here