• মঙ্গলবার ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ১ ১৪৩১

  • || ১২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

Find us in facebook

গাইবান্ধায় ভুল অস্ত্রোপচারে প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১ সেপ্টেম্বর ২০২৪  

Find us in facebook

Find us in facebook

গাইবান্ধায় একটি ক্লিনিকে ভুল অস্ত্রোপচারে প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ ওঠেছে। এ ঘটনায় স্থানীয়রা গত বৃহস্পতিবার ক্লিনিকে তালা ঝুলিয়ে বন্ধ করে দেন।

নিহতের নাম বিপাশা আক্তার (২৮)। ২৩ আগস্ট রাতে ‘গাইবান্ধা ক্লিনিক’ এ বিপাশার অস্ত্রোপচার করেন আব্দুর রহিম নামে এক চিকিৎসক। সেখানে একটি কন্যা সন্তান প্রসব হয়। সেদিনের পর থেকেই দীর্ঘ ৭ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়েন বিপাশা।

শনিবার দুপুরে শহরের কলেজ রোডে গিয়ে দেখা যায়, ক্লিনিকটির মূল ফটকে তালা। কোনো চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফ কেউ নেই। ম্যানেজারও পালিয়ে আছেন।

নিহত বিপাশা গাইবান্ধা সদর উপজেলার পশ্চিম রাধাকৃষ্ণপুর গ্রামের আব্দুল বাকি শেখের মেয়ে এবং শহরের পূর্বপাড়ার ব্যবসায়ী আপনের স্ত্রী।

বিপাশার স্বজনদের অভিযোগ, গাইবান্ধা ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও চিকিৎসকের ভুল অপারেশনে মৃত্যু হয়েছে প্রসূতির। তারা অবিলম্বে দায়ী চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান। একই সঙ্গে ক্লিনিকটি স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়ার কথা বলেন।

নিহতের স্বজনরা জানান, ২৩ আগস্ট সন্ধ্যার দিকে বিপাশাকে সুস্থ অবস্থায় অপারেশনের জন্য গাইবান্ধা ক্লিনিকে নিয়ে যান তার শাশুড়ি। সেদিন রাত ৮টায় অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা ছিল। এ দিকে স্ত্রীর রক্তের সন্ধানে ছিলেন স্বামী আপন। কিন্তু তিনি ক্লিনিকে আসার আগেই বিপাশাকে তাড়াতাড়ি করে রাত ৮টার দিকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়।

সূত্র জানায়, অপারেশনের পর রোগীর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। দীর্ঘ চার ঘণ্টা পরও রক্ত বন্ধে ব্যর্থ চেষ্টা চালায় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। পরে সফল হতে না পেরে ওই দিনই রাত ১টার দিকে রোগীকে রংপুরের ডক্টরস ক্লিনিকে রেফার করে। সেখানে আরও একটি অস্ত্রোপচারে বিপাশার জরায়ু কেটে ফেলা হয়। কিন্তু ততক্ষণে রোগীর অবস্থা অবনতি হলে আইসিইউতে নেওয়া হয়। সেখানে অবস্থা সংকটাপন্ন হলে দুদিন পর তারাও রোগীকে রংপুরের অপর একটি বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্র গুড হেলথ নামক হাসপাতালে রেফার করে। সেখানে ভর্তি নিয়েই তারা আইসিইউতে নেয় বিপাশাকে।

নিহত বিপাশার স্বামী আপন বলেন, আমার সংসার লন্ডভন্ড করে দিল গাইবান্ধা ক্লিনিকের লোকজন। আমি ক্লিনিকে পৌঁছানোর আগেই তারা সিজার করে। সিজারের আগে আমার সাথে কোনো কথাও বলেনি। এমনকি আমার সই নেওয়া হয়নি। আমি গিয়ে দেখি বাচ্চা আমার মায়ের কোলে। আর আমার স্ত্রী অপারেশনের রুমে।

আপনের দাবি, যার কাছে সিজার করাবো সেই ডাক্তার ছিলেন না। কারা অপারেশন করলো সেটাও জানানো হয়নি। সেদিন হয়তো নার্সরাই সিজার করেছেন। রক্তক্ষরণ বন্ধ না হলে আমি ক্লিনিকের ম্যানেজারকে জানাই। তিনি ডাক্তার ডেকে আনার কথা বলে বের হয়ে যান। পরে তাকে ফোন করা হলে ফোন বন্ধ করে রাখেন। আমার স্ত্রীকে তারা একেবারে শেষ মুহূর্তে রংপুরে পাঠিয়েছে। এ মৃত্যুর দায় গাইবান্ধা ক্লিনিকের।

নিহত বিপাশার মা শেলী বেগম বলেন, অস্ত্রোপচারে অন্তত দুই ঘণ্টা পর আমার মেয়েকে বেডে দেওয়া হয়। যখন বেডে দেওয়া হয় তখনো দেখি প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছে। রক্তে বেড ভিজে যাচ্ছে। তখন কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা আবারো অপারেশন থিয়েটারে নেয়। তখন থেকে আরও দুই ঘণ্টা পর তারা আমার মেয়েকে রংপুরে পাঠাতে হবে বলে জানান। এরপর তাদেরই ঠিক করা একটি ক্লিনিকে আমরা রংপুরে যাই। সেখানেও রক্ত বন্ধ না হলে দ্বিতীয়বার তারা আবার অপারেশন করে।

এ বিষয়ে গাইবান্ধা ক্লিনিকের ম্যানেজার কাঞ্চন বলেন, ক্লিনিকের মালিক ডা. একরামুল আমেরিকায় আছেন। আমরা ওই রোগীর চিকিৎসার জন্য এ পর্যন্ত ৭৮ হাজার টাকা দিয়েছি। আপনারা ডা. সেকেন্দারের সঙ্গে কথা বলেন। এ কথা বলেই ফোন কেটে দেন তিনি।

বিপাশার সিজারিয়ান অপারেশনের আ্যানেস্থেসিয়া চিকিৎসক ডা. সেকেন্দার আলী বলেন, ওই রোগীর অপারেশন করেছেন ডা. আব্দুর রহিম। অপারেশনের পর রোগীর রক্তক্ষরণ বন্ধ হচ্ছিল না। পরে তাকে রংপুরের কমিউনিটি মেডিকেলে রেফার করা হয়। সেখানেও রক্ত বন্ধ না হওয়ায় তার জরায়ু কেটে ফেলা হয়।

তিনি আরও বলেন, আমি ওই রোগীকে রংপুরে দেখতে গিয়েছিলাম। রোগীর চিকিৎসার সব খরচ গাইবান্ধা ক্লিনিক বহন করছে। ঘটনার পর থেকে ক্লিনিকে অস্ত্রোপচার বন্ধ রয়েছে। রোগীর স্বজনদের সঙ্গে আমাদের একটা কথা হয়েছে।

নিহত বিপাশার অস্ত্রোপচারকারী চিকিৎসক ডা. আব্দুর রহিমের সঙ্গে বিভিন্নভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

Place your advertisement here
Place your advertisement here