• শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ৬ ১৪৩১

  • || ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

Find us in facebook

করোনা মোকাবিলায় ডিসি-ইউএনওদের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১১ মে ২০২০  

Find us in facebook

Find us in facebook

ছোট্ট একটি ঘর। ঘরটির নাম 'মানবতার ঘর'। এখানে গরিবদের জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রাখা হয়। যেখানে রয়েছে সারি সারি করে রাখা খাদ্যসামগ্রীর প্যাকেট। যাদের খাবারের প্রয়োজন, তারা নিঃসংকোচে এখান থেকে নিয়ে যেতে পারেন। বিত্তবান দানশীল মানুষ এখানে টাকা ও খাদ্যসামগ্রী রেখে যাচ্ছেন প্রতিদিন। করোনাকালে কর্মহীন ও হতদরিদ্রদের খাদ্য সহায়তার জন্য এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর উপজেলা প্রশাসন। একইভাবে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলায় ত্রাণের জন্য ফুড ব্যাংক খোলা হয়েছে।

শুধু নওগাঁ-গাইবান্ধা নয়, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রায় প্রত্যেক জেলা-উপজেলায় চলছে এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। পটুয়াখালী নদীবন্দরে পটুয়াখালী-ঢাকা রুটের যাত্রীবাহী 'এ আর খান-১' লঞ্চকে প্রাতিষ্ঠানিক ভাসমান কোয়ারেন্টাইন ইউনিট হিসেবে চালু করেছে জেলা প্রশাসন। ভাসমান এ ইউনিটে ৪০টি ডাবল এবং ৩৮টি সিঙ্গেল কেবিন রয়েছে। কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তিদের দেখভাল করার জন্য রয়েছেন ডাক্তার। চিকিৎসাসেবা সহজলভ্য করার লক্ষ্যে কক্সবাজারে চালু হয়েছে ভ্রাম্যমাণ হাসপাতাল। একটি মিনি ট্রাককে কেবিন বানানো হয়েছে। সঙ্গে একটি অ্যাম্বুলেন্স। এগুলো নিয়ে কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে চিকিৎসা দিচ্ছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন।

মৌলভীবাজার জেলায় চালু হয়েছে ভ্রাম্যমাণ বাজার। এই দোকান থেকে ঘরে বসে কেনা যাচ্ছে প্রতীকী মূল্যে চাল, ডাল, তেল, আলু ও পেঁয়াজ। 'সময়ের দাবি ত্রাণ যাবে বাড়ি' কর্মসূচির মাধ্যমে নিম্ন আয়ের মানুষের বাড়ি বাড়ি ত্রাণ পৌঁছে দিচ্ছে ঠাকুরগাঁও ও চাঁদপুর জেলা প্রশাসন। ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসনের টিম সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ছয়টি গাড়িতে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছে 'সময়ের দাবি'। নওগাঁ জেলা প্রশাসনে স্বেচ্ছায় শ্রম দিচ্ছে ৪৫০ জনের একটি মানবিক টিম। স্বেচ্ছাসেবীদের মাধ্যমে কর্মহীনদের তালিকা করে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী দেওয়া হচ্ছে ত্রাণ। মেহেরপুর জেলায় করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে ৩০০ স্বেচ্ছাসেবী ও বক্সশেপ হাট দেশব্যাপী প্রশংসিত হচ্ছে। করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের বাড়িতে উপহারসামগ্রী নিয়ে যাচ্ছেন ডিসিরা।

নওগাঁ জেলা প্রশাসক হারুন-অর-রশীদ বলেন, মানবতার ঘরের মাধ্যমে প্রায় সাত হাজার কর্মহীন অসহায় মানুষকে ত্রাণ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া জেলার ৪৫০ স্বেচ্ছাসেবীর সহায়তায় প্রকৃত কর্মহীন ও দরিদ্র মানুষের তালিকা তৈরি করে ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে।

মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, মানবতা ঘরের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য প্রতিদিন আয়-ব্যয়ের হিসাব করা হচ্ছে। ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম বলেন, 'সময়ের দাবি ত্রাণ যাবে বাড়ি' কর্মসূচির মাধ্যমে প্রতিদিন অসহায় মানুষের বাড়িতে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। মানুষের ফোন পেয়ে এ পর্যন্ত প্রায় ছয় হাজার মানুষকে ত্রাণ দেওয়া হয়েছে।

ত্রাণ বিতরণে যেন ডুপ্লিকেটিং না হয়, এ জন্য পৌরসভার অসহায় পরিবারগুলোকে একটি করে কার্ড দেওয়া হয়েছে নেত্রকোনায়। সরকারি বা বেসরকারি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যিনি ত্রাণ বিতরণ করেন, ওই কার্ডে তা লিপিবদ্ধ করে দেওয়া হয়। করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের পাশে দাঁড়িয়ে সাহস দিচ্ছে ঠাকুরগাঁও, সাতক্ষীরা ও পঞ্চগড় জেলা প্রশাসন। ঠাকুরগাঁও ও সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক সম্প্রতি করোনা রোগীদের বাড়িতে যান এবং সঙ্গে নিয়ে যান এক ঝুড়ি ফল ও উপহারসামগ্রী। কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি সবজি ক্রয় করে তা ত্রাণ ও ইফতার সামগ্রীর সঙ্গে দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করছে প্রায় প্রত্যেক জেলা-উপজেলা প্রশাসন। এতে কৃষকদের যেমন ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত হচ্ছে, তেমনি দরিদ্ররাও পাচ্ছেন পুষ্টিকর সবজি। অনেকে ত্রাণসামগ্রীর বস্তা নিয়ে নিজ হাতে বহন করছেন।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এবং করোনাভাইরাসের শুরু থেকে ডিসি-ইউএনওরা মাঠ পর্যায়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ইতোমধ্যে অনেকে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এরপরও তারা অসহায় মানুষের জন্য নানাভাবে কাজ করছেন।

ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন। একই সঙ্গে অনেক কর্মকর্তা অসহায় মানুষের সহায়তার জন্য ব্যতিক্রমী অনেক উদ্যোগ নিয়েছেন, যা সর্ব মহলে প্রশংসিত হচ্ছে।

Place your advertisement here
Place your advertisement here